• কৃত্রিম পায়ে দাঁড়াতে পারবে ছেলে, শুনেই আনন্দে চোখে জল মায়ের
    বর্তমান | ২৪ জানুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: কৃত্রিম পায়ে দাঁড়াতে পারবে ছেলে দেবজিৎ। শুনে আনন্দে চোখে জল ধরে রাখতে পারলেন না তিথি সরকার। আঁচল দিয়ে দু’চোখ মুছে বললেন, গত সাত বছর ধরে এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। কে বলল, প্রশাসন সাধারণ মানুষের কথা ভাবে না? পাশে দাঁড়ানো জলপাইগুড়ি সদরের বিডিও মিহির কর্মকারও তখন আবেগপ্রবণ। বললেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন একটি শিশু কৃত্রিম পা নিয়ে হাঁটতে পারবে। স্কুলে যেতে পারবে। খেলার মাঠে যেতে পারবে। এজন্য পরিবারকে এক টাকাও খরচ করতে হবে না। আমরা এই ব্যবস্থাটুকু করে দিতে পেরেছি, এর চেয়ে খুশির আর কী হতে পারে! দেবজিতের কৃত্রিম পায়ের জন্য চিকিৎসকরা যখন মাপ নিচ্ছেন, তখন পাশে চেয়ারে বসা রামদয়াল সাহার মুখে একগাল হাসি। আর চোখে একরাশ স্বপ্ন। বললেন, সামান্য চোট থেকে সংক্রমণের জেরে বছর খানেক আগে একটা পা কেটে বাদ দিতে হয়। তারপর থেকে বাড়িতেই বসে রয়েছি। চিকিৎসক ভরসা দিয়েছেন, কৃত্রিম পায়ে ভর দিয়ে আমি আবার হালকা কাজকর্ম করতে পারব। সেটুকু পারলে যথেষ্ট। দু’বেলা ডাল-ভাত জুটলেই খুশি।


    জলপাইগুড়ি সদর ব্লক প্রশাসনের তরফে বৃহস্পতিবার বিশেষ ক্যাম্প করা হয় মোহিতনগর কলোনি তারাপ্রসাদ বালিকা বিদ্যালয়ে। ওই ক্যাম্প থেকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের নিখরচায় কৃত্রিম অঙ্গ (জয়পুর ফুট) দেওয়ার পাশাপাশি তুলে দেওয়া হয় সহায়ক সরঞ্জাম। সেখানেই কৃত্রিম অঙ্গ পেয়ে হাসি ফোটে অন্তত পাঁচশো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের মুখে। তিনদিন ধরে চলবে ওই ক্যাম্প।


    শিলিগুড়ির আশিঘরের বাসিন্দা দেবজিৎ। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। জন্ম থেকেই ডান পা অকেজো। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। মায়ের কোলে, পিঠে চড়ে স্কুলে যায়। বিকেলে ওর বয়সিরা যখন মাঠে খেলাধুলো করে, তখন মা তিথি সরকারের কাছে এতদিন শুধু একটাই প্রশ্ন করে এসেছে দেবজিৎ। বলেছে, মা ‘আমি কি কোনওদিন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারব না? মাঠে যেতে পারব না?’ এদিন তিথি বলেন, ছেলেকে সান্ত্বনা দিতাম, নিশ্চয়ই নিজে থেকে দাঁড়াতে পারবি। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব হবে ভেবে পেতাম না! তাঁর কথায়, স্বামী কুরিয়র সার্ভিসে কাজ করে। ছেলের চিকিৎসার জন্য ধার-দেনা করে কলকাতা, বেঙ্গালুরু, দিল্লি ঘুরেছি। সব জায়গা থেকেই বলেছে, অপারেশন করে পা কেটে বাদ দিতে হবে। তারপর কৃত্রিম পা লাগাতে হবে। এরজন্য খরচ অনেক। সমর্থ্যে কুলোয়নি। ফলে ছেলেটা হাঁটতেও পারেনি। 


    দেবজিতের বাবা দেবানন্দ সরকার বলেন, এখানে চিকিৎসকরা দেখে জানিয়ে দিলেন, পা না কেটেই কৃত্রিম পায়ে দাঁড়াতে পারবে ছেলে। সেইমতোই ছেলের জন্য আমাদের সামনেই কৃত্রিম পা বানিয়ে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। আজ আমরা সত্যিই খুব খুশি। নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)