অর্পণ সেনগুপ্ত, কলকাতা: বাবার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। পূরণ হয়নি। তাই ছেলের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন সেই স্বপ্নের বোঝা। আর ছেলেও সেই ‘ওজন’ কাঁধে তুলে ছুটছে। সায়েন্স তার ভালো লাগে না। মন পড়ে থাকে সাহিত্যে। লিখতে ভালো লাগে তার। কিন্তু পারে না। সংবহন, আর পিরিয়ডিক টেবলে আটকে যায় কৈশোর। সে জানে, ডাক্তার হলেও খুব খারাপ চিকিৎসা করবে সে। তবুও চালিয়ে যেতে হবে। কারণ, বাড়ির চাপ। সাহিত্য নিয়ে পড়লে একটু কি বেশি ভালো হতো? সেখানেও যে আত্মবিশ্বাস পায় না। যদি ভালো কিছু করতে না পারে? যদি হারিয়ে যায় সফল কেরিয়ারের স্বপ্ন? এই ভয়ে বলতেও পারে না বাবাকে।
নিজের শক্তি এবং দুর্বলতা চিহ্নিত করে কোন পথে এগলে ভালো হয়, তা বোঝার জন্য আত্মসচেতনতা প্রয়োজন। কোন বিষয়ে ন্যাক—এটা বোঝার জন্য চাই ক্ষমতার যথাযথ যাচাই এবং আত্মবিশ্বাসও। এতদিন কোনও প্রথাগত শিক্ষায় ‘নিজেকে বোঝার জন্য’ আত্মসচেতনতা বিষয়টি পাঠ্য ছিল না। এবার একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমেস্টারে সেটিকে সিলেবাসে আনা হয়েছে। অন্তত, পরবর্তী জীবনে নিজের আয়ত্বের বাইরে কোনও কিছুর পিছনে না ছুটে যেন সুনির্দিষ্ট এবং সম্ভাবনাময় পথ অবলম্বন করতে পারে পড়ুয়ারা। কেউ যদি পড়ায় কেরিয়ার না খুঁজে ক্রিকেট বা ফুটবলে খোঁজে, সেই সাহস জোগাবে এই অধ্যায়। এমনটা ভেবেই স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষার নয়া সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বিষয়টিকে।
উত্তর ২৪ পরগনার একটি স্কুলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের স্কুলেই এক ছাত্রের ম্যাথস অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা হয়েছিল। খুব ভালো ভাবনা। কিন্তু আমরা জানতাম, সে অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে খুব একটা কিছু করতে পারবে না। এমনকী, আমাদের স্কুলের প্রথম ছেলেটিও এই বিষয়ে দারুণ সম্ভাবনাময় নয়। ম্যাথস অলিম্পিয়াডের প্রতিযোগিতা এতটাই কঠিন। তাতে অবশ্য অংশ নিতে অসুবিধা নেই। তারপরও ছেলেটির মা ধার করে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ফি জোগাড় করেছিলেন। আমাদের বাধাও মানেননি। খুবই নেতিবাচক শোনাতে পারে, তবে আমরা পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এখানেই কাজে আসতে পারে আত্মসচেতনতার বিষয়টি।’
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘এখনকার এই ১৬-১৮ বছর বয়সি ছেলেমেয়েরা অনেক এগিয়ে। তবে, তাদের মধ্যে আত্মসচেতনতা বোধ থাকাটাও জরুরি। এটাই সময় নিজেকে চেনা, উপলব্ধি করার। শক্তি এবং দুর্বলতাগুলি চিহ্নিত করে ভবিষ্যৎ জীবন এবং উচ্চশিক্ষায় এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে অধ্যায়টি। আরও কিছু সমসাময়িক বিষয়ের সঙ্গে এটিকেও নয়া সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’ স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষার পাঠ্যবইয়ের রূপকার দ্বীপেন বসু বলেন, ‘এটি লাইফস্কিল তথা জীবনকুশলতার একটি অংশ। শুধু মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা নয়, জীবনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতেও বিষয়গুলি সহায়ক হবে। কোনও পুঁথিগত বিষয়ে এসব এতদিন ছিল না।’ অর্থাৎ শিক্ষাদপ্তর আশাবাদী, এমন একটা বিষয় সিলেবাসে থাকলে আখেরে উপকার হবে পড়ুয়াদের। আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আর তারা বাবা-মাকেও বলতে পারবে, সায়েন্স পড়ব না। বাংলা সাহিত্যই আমার ভবিষ্যৎ।