• সাইবার প্রতারণা, এ বার কলকাতা থেকে ধৃত এক
    এই সময় | ২৪ জানুয়ারি ২০২৫
  • অরূপকুমার পাল, ঝাড়গ্রাম

    ঝাড়গ্রামে সাড়ে ২৬ লাখ টাকা সাইবার প্রতারণার মামলায় রাজস্থানে দু’জনকে গ্রেপ্তারের পর এ বার কলকাতা থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। ঝাড়গ্রাম সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম সঞ্জীবকুমার জানা। বাড়ি কলকাতার হরিদেবপুর থানার পূর্ব বড়িশার রাজা রামমোহন রায় রোডে। ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা প্রতারিত ব্যক্তি রামানুজ দত্তের ব্যাঙ্ক লেনদেনের সূত্র ধরেই সঞ্জীবকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রতারণার সাড়ে ২৬ লাখ টাকার মধ্যে সঞ্জীবের অ্যাকাউন্টে আড়াই লাখ টাকা ঢুকেছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

    গত বছর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ঝাড়গ্রামের রঘুনাথপুর এলাকার বাসিন্দা রামানুজ দত্তকে সিবিআই পরিচয় দিয়ে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ করে অভিযুক্ত কয়েকজন ব্যক্তি। জামিনে মুক্ত হতে তাদের দাবিমতো একাধিকবার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে দফায় দফায় মোট ২৬ লাখ ৪৬ হাজার ৮৯০ টাকা পাঠান রামানুজ। সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ জানায়, ভুয়ো সিবিআই অফিসার পরিচয় দিয়ে রামানুজকে ফোন করে বলা হয়, তাঁর আধার কার্ড দিয়ে একটি বেআইনি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। সেখানে বেআইনি অর্থ লেনদেন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে মামলাও চলছে।

    রামানুজের মনে বিশ্বাস জাগানোর জন্য তাঁর হোয়াটস্যাপে সিবিআইয়ের ‘সিলমোহর’ দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের একটি জাল নথিও পাঠানো হয়। তারপর সিবিআইয়ের ভুয়ো অফিস থেকে স্কাইপ–এর মাধ্যমের ভিডিয়ো কল করে সাতদিন ঘরে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ করা হয় রামানুজকে। কিন্তু এর থেকে মুক্তির উপায় কী জানতে চাইতেই রামানুজকে টাকার টোপ দেওয়া হয়। জামিনের জন্য প্রতারকদের কথামতো রামানুজ তাদের দেওয়া বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে বাবার জমানো ফিক্সড ডিপোজ়িট ভেঙে টাকা পাঠাতে শুরু করেন। দফায় দফায় মোট সাড়ে ২৬ লাখ টাকা নেওয়া হয়। এর পরেই রামানুজ বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারণার শিকার। ২০ জুলাই তিনি ঝাড়গ্রাম সাইবার ক্রাইম থানায় বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।

    সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ জানায়, যে সব অ্যাকাউন্টে দফায় দফায় টাকা পাঠানো হয়েছিল সেগুলো মহারাষ্ট্র, দিল্লি, গুজরাট, মুম্বাই, রাজস্থান, কলকাতা, বেঙ্গালুরুর মতো দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা কারেন্ট অ্যাকাউন্টে। যেখানে সহজেই লাখ লাখ টাকা লেনদেন করা যায়। পুলিশ ওই সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলোর বেশ কিছু ‘ফ্রিজ়’ও করে দিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ গত ১২ জানুয়ারি রাজস্থানে গ্রেপ্তার করে ঝাড়গ্রামে নিয়ে আসে এক কলেজ পড়ুয়া–সহ দু’জনকে। ধৃতেরা হল সুরিন্দর কুমার ডিগিয়া এবং ফাইজান ওরফে আরিয়ান মালিক। তাদের বাড়ি রাজস্থানে। এই মুহূর্তে তারা ঝাড়গ্রাম আদালতে বন্দি।

    গতকাল মামলার তদন্তকারী অফিসার নীলাদ্রি প্রামাণিকের নেতৃত্বে চারজনের একটি টিম কলকাতা থেকে সঞ্জীবকে গ্রেপ্তার করে ঝাড়গ্রামে নিয়ে আসে। পুলিশ জানিয়েছে, সঞ্জীবের বাবা কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী। সঞ্জীব অনলাইন গেমিংয়ের ব্যবসা করে। মূলত ভুয়ো নথি দিয়ে প্রথমে ট্রেড লাইসেন্স বানাত সে। তারপর ওই লাইসেন্স দেখিয়ে ব্যাঙ্কে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলত। তারপর ওই অ্যাকাউন্টগুলি ভাড়া দিয়ে সাইবার প্রতারণার লাখ লাখ টাকা ঢোকানো হত।

    ঝাড়গ্রাম সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ গতকাল রাত ১টা নাগাদ কলকাতায় সঞ্জীবের বাড়িতে পৌঁছলেও রাতে বাড়ির দরজা খোলেনি সঞ্জীব। ভোর ৪টে নাগাদ দরজা খুলিয়ে সঞ্জীবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে ধৃতকে ঝাড়গ্রামের সিজেএম আদালতে তোলা হয়। আদালত ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন মঞ্জুর করে। ঝাড়গ্রামের ডিএসপি (সাইবার ক্রাইম) সব্যসাচী ঘোষ বলেন, ‘ধৃতকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করে এবং এই প্রতারণা চক্রে আরও কারা যুক্ত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

  • Link to this news (এই সময়)