• কলকাতায় বিগড়ে গেল ৭১ উড়ানের পরিষেবা
    এই সময় | ২৪ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: ঘন কুয়াশায় জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দু’দিন কলকাতা বিমানবন্দরে উড়ান পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটেছিল। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল বৃহস্পতিবার। দেশনায়কের জন্মদিনে সুভাষচন্দ্রের নামাঙ্কিত বিমানবন্দর এ দিন ভোর থেকেই ঘন কুয়াশার চাদরে মুড়ে যায়। যার জেরে এ দিন কলকাতা থেকে প্রায় ৩৯টি উড়ান দেরিতে ছাড়ে। তাদের মধ্যে দু’টি উড়ান রানওয়ে পর্যন্ত গিয়েও উড়তে না–পেরে ফিরে আসে র‍্যাম্পে।

    ২১টি উড়ান নামতে দেরি করে। আবার বেঙ্গালুরু, আমেদাবাদ, মুম্বই, দুবাই, পুনে থেকে শহরের মাথায় এসেও ১১টি উড়ানকে ভূবনেশ্বর, রাঁচি ও সামসাবাদে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, কুয়াশার জেরে সব মিলিয়ে প্রায় ৭১টি উড়ানের সূচি বিগড়ে যায়। বিমানবন্দরের এক কর্তা বলেন, ‘বুধবার মাঝরাত থেকেই কুয়াশা বাড়তে শুরু করে। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ৯টা পর্যন্ত এলভিপি বা লো ভিজ়িবিলিটি প্রসিডিওর চালু ছিল। ওই সময় ফ্লাইট অপারেশন সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। বেলা ৯টায় আবহাওয়ার উন্নতি হলে পুনরায় উড়ান চলাচল শুরু হয়।’

    কুয়াশায় উড়ান দেরিতে ছাড়ার কারণে সমস্যা হয় মূলত যাত্রীদের। সকালে এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানে শহর থেকে দিল্লি হয়ে আমস্টারডাম যাওয়ার জন্য ভোর সাড়ে পাঁচটায় বিমানবন্দরে পৌঁছে যান আইটি ইঞ্জিনিয়ার, কসবার শ্রীপম সিনহা। কিন্তু, সকালের কুয়াশা ও পরে দিল্লি বিমানবন্দর বন্ধ থাকার জন্য তাঁকে সেই যাত্রা বাতিল করতে হয়েছে। জানিয়েছেন, টিকিটের টাকা ফেরত পেলেও দোহা হয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে তাঁর পকেট থেকে অতিরিক্ত সাড়ে ন’হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সূত্রের খবর, প্রতি দিন সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত — দু’ঘণ্টা দিল্লি বিমানবন্দরে যাত্রী উড়ান নামাওঠা বন্ধ করে প্রজাতন্ত্র দিবসের মহড়া চালাচ্ছে বায়ুসেনা।

    তবে শুধু কলকাতা নয়, এ দিন সকালে কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয় বাগডোগরার উড়ান পরিষেবাও। মুম্বই থেকে সকাল এগারোটায় বাগডোগরায় পৌঁছেও নামতে না–পেরে কলকাতায় চলে আসে ইন্ডিগোর উড়ান। তার যাত্রী শোভন মান্না জানান, পরে দুপুর আড়াইটে নাগাদ তিনি পৌঁছতে পারেন বাগডোগরায়। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, কুয়াশার জেরে এ দিন বাগডোগরায় দশটি উড়ান বাতিল হয়েছে। পাঁচটি উড়ান দেরিতে নেমেছে। এ দিন সকালে প্রথম উড়ান নামে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে। বিমানবন্দরের এক আধিকারিক বলেন, ‘দৃশ্যমানতা কম থাকায় পাঁচটি উড়ান অন্য শহহরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দুপুরের পরে সেগুলি ফিরে আসে।’

    শ্রীপম জানিয়েছেন, সকালে কলকাতা বিমানবন্দরে ছিল থিকথিকে ভিড়। প্রচুর মানুষ এয়ারলাইন্সের কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে কার্যত চিৎকার করছিলেন। পর পর এতগুলো উড়ান বাতিল ও দেরি হওয়ায় বহু যাত্রী আটকে পড়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, কলকাতা থেকে ৭টা ২০–র ফ্লাইট ছিল তাঁর। দিল্লি থেকে কানেক্টিং ফ্লাইট ছিল দুপুর দেড়টায়। দুটোই এয়ার ইন্ডিয়ার। কলকাতায় বিমানে উঠে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে পাইলট ঘোষণা করেন, ভিজ়িবিলিটি পুওর। ওড়ার অনুমতি পাওয়া যায়নি। কিছুক্ষণ পরে পাইলট জানান, ওয়েদার ক্লিয়ার হলেও দিল্লির এয়ারস্পেস ক্লোজ়ড থাকায়, সকাল ১১টার আগে কলকাতা থেকে উড়তে পারব না। যাত্রীদের নেমে যেতে বলেন তিনি।

    শ্রীপমের কথায়, ‘দুপুর একটার পরে দিল্লি নেমে আমি কানেক্টিং ফ্লাইট ধরতে পারতাম না। এয়ারলাইন্সের কাউন্টারে গেলে আমাকে বলা হয়, আজ পরের ফ্লাইটে দিল্লি চলে যেতে। কাল, শুক্রবার আমস্টারডাম ফ্লাইটে আমার সিট বুক করে দেবে। কিন্তু, আজ রাতে দিল্লিতে থাকার ব্যবস্থা কী হবে, তা নিয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারেনি। বলেছে, হোটেল রুম পেলে ব্যবস্থা হবে। না–পেলে আপনাকে করে নিতে হবে। আমি ঠিক করি, তার চেয়ে কলকাতায় থেকে যাওয়া ভালো। তাই, টাকা ফেরত নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছি।’

  • Link to this news (এই সময়)