• ফগ করিডরে দক্ষিণবঙ্গ, ক্রমশ গরম হচ্ছে রাতও
    এই সময় | ২৪ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: সকাল ৮টাতেও রোদের দেখা নেই। দৃশ্যমানতা বেশ কম। ইএম বাইপাসে হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চলছে রীতিমতো ধীর গতিতে। ২৩ জানুয়ারি সকালে এমনই পরিস্থিতির সাক্ষী রইল শহর কলকাতা। একাধিক অন্তর্দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উড়ান কলকাতার বদলে ল্যান্ড করতে বাধ্য হলো চেন্নাই–ভুবনেশ্বরে। পূর্ব ও দক্ষিণ–পূর্ব রেলেও বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে লাইনের উপর ঘন কুয়াশার চাদর। কোথাও কোথাও দৃশ্যমানতা ২০ মিটারের কাছাকাছি। তাই গতি কমিয়ে, বার বার হর্ন বাজিয়ে চললো ট্রেন।

    বৃহস্পতিবার সকালে এমন পরিস্থিতি শুধু কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকাতেই ছিল, তা নয়। দক্ষিণবঙ্গের বড় অংশই এ দিন ঢেকেছে ঘন কুয়াশায়। ২৩ জানুয়ারি সকালে মৌসম ভবনের প্রকাশ করা রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, পাঞ্জাব ও দিল্লি থেকে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড হয়ে বাংলা এবং উত্তর–পূর্ব ভারতের অনেকটা অংশ জুড়ে তৈরি হয়েছে ‘ফগ করিডর’ বা কুয়াশা–পথ। কয়েক হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলাকা ভোর থেকে পুরোপুরি কুয়াশার দখলে। উত্তর–পশ্চিম ভারতে তৈরি হওয়া পশ্চিমী ঝঞ্ঝা, দেশের উত্তর–পূর্ব ও দক্ষিণ প্রান্তে তৈরি একাধিক ঘূর্ণাবর্তের জেরে ভারত ভূখণ্ডে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প ঢুকে পড়েছে। আবহবিদরা জানাচ্ছেন, ওই জলীয় বাষ্পই উত্তরের সমভূমির সংস্পর্শে এসে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করে কুয়াশায় পরিণত হয়েছে।

    দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে অবশ্য কুয়াশার পাশাপাশি অন্য চিন্তাও রয়েছে। সেটা হলো শীতের অকালবিদায়ের সম্ভাবনা। কলকাতায় রাতের তাপমাত্রা ১২ জানুয়ারির পরে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নামেনি। একই সময়ে শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও ২৩ ডিগ্রির ঘরে নামতে পারেনি। এই ১২ দিনের বেশির ভাগ সময়েই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৪–২৫ ডিগ্রির মধ্যে থেকেছে। ২২ জানুয়ারি দিনের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রিও ছুঁয়েছে। আবহবিদদের আশঙ্কা, হয়তো জানুয়ারি পার করার আগেই শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রিতে পৌঁছবে। গত বছর সেই তাপমাত্রা উঠেছিল ২০ ফেব্রুয়ারিতে। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, সামনের কয়েক দিন বাংলার — বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের রাতের তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে। তার পর পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কিছুটা দুর্বল হলে দু’তিন দিনের জন্য রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কমার আশা রয়েছে। তবে, ‘হাড় কাঁপানো’ শীত পড়ার সম্ভাবনা আর তেমন নেই।

    তবে কিছুটা অন্য ছবি দেখছে উত্তরবঙ্গ। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জেরে মেঘলা আকাশ এবং কুয়াশা ঘেরা আবহাওয়ায় ঠান্ডায় কাঁপছে জেলাগুলি। গত দু’দিন ধরেই পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সক্রিয় হয়েছে উত্তরবঙ্গ ও সিকিমে। উত্তরবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনা না-থাকলেও সিকিমে বৃষ্টি এবং তুষারপাত— দুটোই হতে পারে বলে আবহাওয়া দপ্তর পূর্বাভাস দিয়েছে।

    উত্তরবঙ্গে দিন ও রাতের তাপমাত্রার ফারাক আপাতত কমে গিয়েছে। সচরাচর এই সময়ে রাতে গড়ে ১০-১২ ডিগ্রি এবং দিনে গড়ে ২২-২৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকে। সেখানে বৃহস্পতিবার দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছে যায়। সঙ্গে জুড়েছে উত্তুরে হাওয়া। এর পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের মতো বৃহস্পতিবার ভোর থেকে কুয়াশায় ঢেকে যায় শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, ডুয়ার্স–সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। দুপুরে কুয়াশা কমলেও মেঘলা আকাশে ঠান্ডা ছিল যথেষ্টই।

    গ্যাংটকের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের ডিরেক্টর গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জেরেই এই পরিস্থিতি। শুক্রবার থেকে কুয়াশা হালকা হতে পারে। তবে সিকিমে বৃষ্টি হলেও উত্তরবঙ্গে দিনের তাপমাত্রা আরও নামবে।’ দৃশ্যমানতার সমস্যায় এ দিন বাগডোগরায় বিমান পরিষেবাও কিছুটা ব্যাহত হয়েছে।

  • Link to this news (এই সময়)