সঞ্জয় দে, দুর্গাপুর
৩২০ কোটি টাকায় হাতবদল হয়ে গেল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ফেরো স্ক্র্যাপের। জাপানের কোনোইকে ট্রান্সপোর্টের সঙ্গে বিক্রির চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে। গত মঙ্গলবার দিল্লিতে তার হস্তান্তর পর্ব চূড়ান্ত হয়। ফেরো স্ক্র্যাপের মতো লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে কেন্দ্রের বিক্রি করে দেওয়ার খবরে দেশের বিভিন্ন ইউনিটের সঙ্গে দুর্গাপুরেও বিক্ষোভ দেখান কর্মীরা। তাঁদের দাবি, বেসরকারিকরণ হলেও ছাঁটাই করা যাবে না কোনও কর্মীকে। প্রাপ্য সমস্ত সুযোগ সুবিধা দিতে হবে কর্মীদের।
স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (সেইল) অধীনে দেশের ৯টি ইস্পাত কারখানায় ইউনিট রয়েছে ফেরো স্ক্র্যাপের। পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপুর স্টিল প্লান্ট ও বার্নপুর স্টিল প্লান্টে ফেরো স্ক্র্যাপের দু’টি ইউনিট রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে এই সংস্থায় এগজ়িকিউটিভের সংখ্যা ১০৫। নন এগজ়িকিউটিভ রয়েছেন ২৬৭ জন। ঠিকাকর্মীর সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। আপাতত সিদ্ধান্ত হয়েছে, এগজ়িকিউটিভ ও নন এগজ়িকিউটিভরা আগামী এক বছর বর্তমান হারে বেতন পাবেন। কাউকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হবে না। কিন্তু ঠিকাকর্মীদের ক্ষেত্রে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে ঠিকাকর্মীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ফেরো স্ক্র্যাপের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে আসা আইএনটিটিইউসি–র দুর্গাপুরের নেতা প্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরে আমরা দুর্গাপুরে সংস্থার আধিকারিকদের কাছে ডেপুটেশন দিয়ে জানিয়েছি, সব ঠিকাকর্মীকে কাজে বহাল রাখতে হবে। একই সঙ্গে দিতে হবে তাঁদের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা। পরে সময় মতো জাপানি সংস্থার কর্তারা দুর্গাপুরে এলে তাঁদের কাছেও এই দাবি জানানো হবে।’ হতাশ এই শ্রমিক নেতা বলেন, ‘বিস্তর আন্দোলন চালিয়েও কোনও লাভ হলো না। প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে মাত্র ৩২০ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হলো।’ ফেরো স্ক্র্যাপের দুর্গাপুর ইউনিটের আধিকারিক রণজিৎ শর্মার দাবি, ‘শুরুর দিন থেকে আজ অবধি কখনও লোকসানে চলেনি ফেরো স্ক্র্যাপ। একটা লাভজনক সংস্থাকে জলের দরে বিক্রি করে দেওয়া হলো। আগামী এক বছর আমাদের কর্মজীবন হয়তো সুরক্ষিত থাকবে কিন্তু, তার পর কী হবে জানি না। তখন হয়তো চাকরি বাঁচাতে আন্দোলনে নামতে হবে।’
ইস্পাত কারখানার ছাঁট লোহা ও স্ল্যাগ (লৌহ আকর থেকে ধাতুর মূল অংশ আলাদা করার পর বর্জিত অংশ) সংগ্রহ করে ফেরো স্ক্র্যাপ। প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ওই ছাঁট লোহা ও স্ল্যাগ ফের ইস্পাত তৈরির উপযোগী করে তোলা হয়। তার পর তা প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করা হয় ইস্পাত কারখানায়।
২০১৬ সাল থেকে ফেরো স্ক্র্যাপকে বেসরকারি হাতে ঠেলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকার। তখন থেকে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে এসেছেন কর্মীরা। শেষে আদালতের দ্বারস্থ হয়েও রোখা গেল না বেসরকারিকরণ। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, বেসরকারিকরণের জন্য ফেরো স্ক্র্যাপের দর রাখা হয়েছিল ২৬২ কোটি টাকা। জাপানের কোনোইকে ও এই দেশের ইন্ডিক জিও রিসোর্স ফেরো স্ক্র্যাপ কেনার জন্য দরপত্র জমা করে। জাপানি সংস্থাটির দর বেশি হওয়ায় তাদের হাতেই গেল ফেরো স্ক্র্যাপ। স্টিল সেক্টারে ১৪০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে টোকিয়ো স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত কোনোইকের।