• ১৬-য় বিয়ে তবু থামেনি পড়া, পথ দেখাচ্ছে খুশবু
    এই সময় | ২৪ জানুয়ারি ২০২৫
  • বাবাকে নিয়ে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস–এ বেরবো! বাঞ্জি জাম্পিং, প্যারা গ্লাইডিং ... আর রিস্কি রাইডসে চড়ব। বাবাকে নিয়েই! — কথাগুলো যখন বছর ২১-এর ফলক ইশরত বলছিলেন তাঁর চোখ-মুখ বলে দিচ্ছিল পড়াশোনা শেখার সার্থকতা। এক সময়ে আটকে গিয়েছিল কিশোরী ফলকের পড়াশোনা। চলছিল বিয়ের তোড়জোড়।

    কিন্তু পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্নটাকে সে জাপ্টে ধরে রেখেছিল। তাই সব বাধা পেরিয়ে ফিরতে পেরেছিল স্কুলে। এই তরুণী এখন নিজেই একজন রোল মডেল। মেয়েদের পড়াশোনা যাতে কোনও ভাবেই বন্ধ না হয়ে যায় সে জন্য নিরলস কাজ করে চলছেন তিনি। স্কুলমুখী করেছেন বহু মেয়েকে।

    ফলকের স্পষ্ট কথা, ‘আমাদের নিজেদেরই নিজের জন্য লড়াই করতে হবে।’ কলকাতার গঙ্গাবক্ষে ‘Sail to EmpowHER’ নামে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে এর পরেই যখন সেই তরুণী ‘আকাশ ছোঁয়ার’ কথা বললেন প্যারাগ্লাইডিং, বাঞ্জি জাম্পিং বা হাই রাইডস-এ ওঠার কথা বলেন তখন বাকি মেয়েদের মুখগুলো ঝকঝক করছে। সত্যিই তো, ডানা তো তাদের আছেই, উড়তে বাধা কোথায়? কিন্তু বাধা তো আছে প্রতি পদেই। সে কথাই বললেন কলকাতার ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার স্যর অ্যান্ড্রু ফ্লেমিং।

    জানালেন, মেয়েদের পড়াশোনার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে তো হবেই, সঙ্গে দিয়ে যেতে হবে আত্মবিশ্বাস জাগানোর টনিক! পোর্ট ট্রাস্টের ডেপুটি চেয়ারম্যান সম্রাট রাহির কথায়, ‘একটি মেয়েকে পড়াশোনা করানোর অর্থ শুধু তাকে শিক্ষিত করা পুরো দেশকে সে দিশায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’

    স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ক্রাই’–এর পূর্বাঞ্চলীয় ডিরেক্টর তৃণা চক্রবর্তী বললেন, ‘প্রতি ৫ জন মেয়ের মধ্যে মাঝপথে স্কুল ছেড়ে দেয় ৩ জন। যাদের ইচ্ছা থাকে তারাও আর স্কুলের মুখ দেখতে পায় না। সে জন্যই গত বছর আমরা দেশজুড়ে ‘পুরি পড়াই, দেশ কি ভালাই’ (পড়াশোনা সম্পূর্ণ হলে দেশেরও ভালো) ক্যাম্পেন শুরু করেছিলাম। দেশজুড়ে প্রায় ২ লক্ষ মেয়েকে স্কুলের রেজিস্টারে নাম তোলানো গিয়েছে।’

    তেমনই উদাহরণ ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রামের খুশবু। বাল্যবিবাহ বাড়ির চাপে করতে হয়েছে তাকে। কিন্তু বিয়ে করেছিল একটাই শর্তে, ঘরকন্নার কাজ নয়, সন্তানের জন্ম দেওয়া নয় — তাকে পড়াশোনা করতে দিতে হবে। তবেই সে ১৮–র আগে বিয়ে করবে। সে সুযোগ পেয়েছে খুশবু। এখন ঝামুয়ার রোলমডেল সে। ঝাড়খণ্ডের জনজাতি এলাকায় স্কুলছুটের সংখ্যা প্রচুর। তার অন্যতম কারণ আর্থিক সংস্থান না থাকা ও বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রম। খুশবু তাই নিজেই এখন পড়াশোনার পাশাপাশি একটি অ্যাডোলেসেন্ট গ্রুপ চালায়। তাই খুশবু দিদি এখন বাকিদের চোখে ‘হিরো।’ বাংলার ক্লাস টেনের রিয়া ও তৃষার স্বপ্ন নিজেদের আইডেন্টিটি তৈরি করা। পড়াশোনা ছাড়া যে তা সম্ভব নয়, সে কথাই বলল তারা।

    তবে এখনও যে মেয়েরা কোনও না কোনও বাধায় স্কুলে যায় না বা যেতে পারে না, তাদের সকলের জন্য ডান্সার্স গিল্ড ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অফ উইমেন স্টাডিজ়’ তুলে ধরল মহিলাদের ক্ষমতায়নের নৃত্য-আলেখ্য ‘খরস্রোতা!’ বার্তা, পাহাড়ি দুর্গমতা পেরিয়ে শক্তি ক্ষয় করেও তো ছুটে চলে সেই নদী। সে ভাবেই সব প্রতিকূলতাকে পেরিয়ে নিজের শক্তিতে বলীয়ান হবে প্রতিটি শিশুকন্যা। শপথ এমনই।

  • Link to this news (এই সময়)