• ব্যক্তিগত আক্রোশেই চলে গুলি, ব্যারাকপুরে ধৃত ৩
    এই সময় | ২৪ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, ব্যারাকপুর: ব্যারাকপুরে দিন দুপুরে গুলি চালানোর ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিন দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। ধৃতদের নাম শেখ কাউসার ওরফে আরিয়ান, কুলদীপ দাস ওরফে চুয়া এবং দীপক বাল্মীকি। এদের মধ্যে শেখ কাউসার এবং কুলদীপ দু–রাউন্ড গুলি চালিয়েছিল মহম্মদ ইমদাদ হককে। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই ধৃতরা গুলি চালিয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছেন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশকর্তারা।

    বৃহস্পতিবার ধৃতদের ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে ১২ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। তাদের জেরা করে গুলি চালানোয় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি মোটিভ এবং এই ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখতে চাইছেন পুলিশকর্তারা।

    গুলিবিদ্ধ মহম্মদ ইমদাদ হকের বাড়ি ব্যারাকপুরের সব্জিমহলে। ধৃতদের বাড়িও একই এলাকায়। এক বছর আগেও এদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিল। এলাকায় একসঙ্গেই আড্ডা দিত চারজন। কিন্তু সম্প্রতি কিছু ঘটনার কারণে ধৃতদের সঙ্গে আক্রান্ত মহম্মদ ইমদাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। অবনতিও হয় সম্পর্কের। ফলে ইমদাদের বিরুদ্ধে ক্রমেই ব্যক্তিগত আক্রোশ বাড়ছিল কাউসার, কুলদীপ এবং দীপকের।

    কিছুদিন আগে ওই সব্জিমহলেই পাড়ার একটি গণ্ডগোলে স্থানীয় একজনকে প্রাণে বাঁচিয়েছিলেন ইমদাদ। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে, গুলি চালানোর ঘটনার তিন–চার দিন আগে ইমদাদ কোনও একটা বিষয় নিয়ে গালিগালাজ করেন কাউসারের মাকে। এর জেরেই ইমদাদের উপর আরও আক্রোশ বেড়ে গিয়েছিল কাউসারের। কাউসারের সঙ্গে জোট বাঁধে কুলদীপ এবং দীপক।এর পরেই ইমদাদকে প্রাণে মারার পরিকল্পনা করে ধৃতরা।

    বুধবার সব্জিমহলের বাড়ি থেকে বের হয়ে চিড়িয়ামোড় সংলগ্ন সব্জিমহল আর্দালি বাজার রোডের একটি পুরোনো পরিত্যক্ত বিদ্যুৎ দপ্তরের জমিতে বাইক আনতে গিয়েছিলেন ইমদাদ। ওই সময়েই ধৃতরা ইমদাদকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। দু–রাউন্ড গুলি চলে। তাদের কাছে একটি সেভেন এমএম পিস্তল এবং দু’টি ওয়ান শটার ছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। একটি গুলি ইমদাদের ডানদিকে বুকের নীচে লাগে। আর একটি গুলি শরীর ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়।

    পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, শেখ কাউসার আগে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করত। কুলদীপ এমব্রয়ডারির কাজ করত। কিন্তু বর্তমানে কারও স্থায়ী কোনও কাজ নেই। ব্যারাকপুর এবং টিটাগড় থানায় ধৃতদের বিরুদ্ধে আগেও অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ ছিল।

    ঘটনার পরেই কমিশনারেটের বিরাট পুলিশ বাহিনী গিয়ে গুলিবিদ্ধ মহম্মদ ইমদাদ হককে উদ্ধার করে নিয়ে আসে বি এন বসু হাসপাতালে। তবে, অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরের আগেই ইমদাদের বয়ান নিয়েছিল পুলিশ। পুলিশের কাছে ইমদাদ তিনজনের নাম করেন। তাঁর বয়ানের ভিত্তিতেই অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে শুরু করে পুলিশ। পাশাপাশি অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশের আলাদা আলাদা টিম তল্লাশি অভিযান চালায়।

    ঘটনার পর থেকেই ব্যারাকপুর এবং সংলগ্ন এলাকায় নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল তিন অভিযুক্ত। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। বুধবার গভীর রাতে সোদপুর অটোস্ট্যান্ডের কাছ থেকে ওই তিন দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডি সি সেন্ট্রাল ইন্দ্রবদন ঝা বলেন, ‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই গুলি চলেছে। ধৃতদের জেরা করে মোটিভ সম্পর্কে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

  • Link to this news (এই সময়)