এই সময়, কাঁথি: সর্ষের মধ্যেই কি ভুত! প্রতারণার অভিযোগে কাঁথি আদালতের এক আইনজীবীর গ্রেপ্তারের ঘটনায় আদালতের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কী ভাবে বার অ্যাসোসিয়েশনের নজর এড়িয়ে প্রায় দেড়–দু’বছর ধরে এক ব্যক্তি আইনজীবী সেজে খোদ ম্যাজিস্ট্রেটের সই ও স্ট্যাম্প জাল করে প্রতারণা চালিয়ে গেলেন?
বুধবার কাঁথি আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগের ভিত্তিতে ননীগোপাল শীট নামের এক আইনজীবীকে প্রথমে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেপ্তার করে কাঁথি থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাঁকে ন’দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয় কাঁথি আদালত।
পুলিশ জানিয়েছে, বছর ত্রিশের এই ব্যক্তির বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর থানার মুকুন্দপুরে। কাঁথির এসডিপিও দিবাকর দাস বলেন, ‘সই ও স্ট্যাম্প জাল করে প্রতারণার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কাঁথি আদালতের আইনজীবীদের অভিযোগের ভিত্তিতে। ওই ব্যক্তির আইন পাশের সার্টিফিকেট ও আইকার্ড যাচাই করা হচ্ছে।’
কাঁথি আদালতের আইনজীবীরা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, ননীগোপাল শীট কাঁথি আদালতের দুই বার অ্যাসোসিয়েশনের কোনওটারই সদস্য নয়। তা সত্ত্বেও আদালতে প্রাকটিস করতেন। মূলত হলফনামার কাজ করেন। শুধু সাধারণ মানুষজন নয়, আদালতের অনেক আইনজীবীও তাঁকে দিয়ে ওই কাজ করাতেন। অনেকে জানিয়েওছেন, কাঁথি আদালতে যেখানে দিনে ৫০টি হলফনামা তৈরির কথা, সেখানে দিনে ১০০-২০০ মানুষ হলফনামার জন্য, ম্যারেজ সার্টিফিকেট–সহ অন্যান্য সার্টিফিকেটের জন্যে আসেন।
সেই বিপুল চাহিদার কথা মাথায় রেখে ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারকের সই ও স্ট্যাম্প জাল করে ব্যবসা ফেঁদে বসেন এই ননীগোপাল। এই জালিয়াতি প্রথমে নজরে আসে কাঁথি আদালতের ল ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক রাজকুমার দাসের। তিনি বিষয়টি আদালতের দুই বার অ্যাসোসিয়েশনের নজরে আনেন। দুই অ্যাসোসিয়েশনই খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, আইনজীবী পরিচয় দেওয়া ননীগোপাল দুই অ্যাসোসিয়েশনের কোনওটারই সদস্য নন। এরপর আইনজীবীরা কাঁথি থানায় অভিযোগ জানালে বুধবার সন্ধ্যায় ননীগোপালকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
কাঁথি আদালতের ক্রিমিন্যাল বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আনন্দ দাস বলেন, ‘আমাদের নজর এড়িয়ে এই আইনজীবী প্রতারণা চক্র চালাতেন। বুধবার আইনজীবীদের বিশ্রামঘরের তিনতলায় বসে জাল হলফনামা তৈরির সময় কয়েকজন আইনজীবী তাঁকে হাতেনাতে ধরে পুলিশের হতে তুলে দেন।’
দুই বার অ্যাসোসিয়েশনের নজরদারির অভাব ও গাফিলতির জেরেই এই ঘটনা বলে আদালতের আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে ক্রিমিন্যাল বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আনন্দ দাস বলেন, ‘কাঁথি আদালতে দুই বার অ্যাসোসিয়েশান মিলে প্রায় ৮০০ আইনজীবী কাজ করেন। প্রতিদিন অনান্য আদালতের আইনজীবীরাও বিভিন্ন মামলার প্রয়োজনে আদালতে আসেন। প্রত্যেক আইনজীবী তাঁদের মক্কেলের হয়ে কাজ করেন। আইনজীবীদের প্রাকটিসে বার অ্যাসোসিয়েশন মাথা গলাতে পারে না। আইনজীবী ধরে ধরে তথ্য যাচাই সম্ভব নয়।’
কাঁথি আদালতের অ্যাসিস্্যান্ট পাবলিক প্রসিকিউটর মঞ্জুর রহমন খান বলেন, ‘ধৃত আইনজীবী বার কাউন্সিলের সার্টিফিকেট কার্ড দেখিয়ে আদালতে প্রাকটিস করতেন। তবে আইকার্ড ও লাইসেন্স নম্বর যাচাইয়ের ব্যবস্থা এখানে নেই। ফলে ভুয়ো আইনজীবী বলাও ঠিক নয়। পুলিশ তদন্ত করলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’