• সাইকেল ভ্যান চালিয়ে মহাকুম্ভের পথে ৭৮ বছরের বৃদ্ধ, সঙ্গী স্ত্রী  
    বর্তমান | ২৫ জানুয়ারি ২০২৫
  • সুমন তিওয়ারি, আসানসোল: ৭৮ বছরের বৃদ্ধের পায়ের চাপে ঘুরছে সাইকেল ভ্যানের চাকা। তার উপর আসীন তাঁর ৭০ বছরের স্ত্রী। স্ত্রীকে ভ্যানে বসিয়ে কৃষ্ণনগরে দর্জি দুলাল বিশ্বাস ওরফে বাঁকা চলেছেন মহাকুম্ভে। না, পুণ্য অর্জনের জন্য নয়। তিনি চলেছেন পরিবেশ দূষণ রোধের লক্ষ্য নিয়ে। পায়ে টানা ভ্যানে সাড়ে সাতশো কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে কুম্ভে হাজির হওয়া হাজার হাজার মানুষকে বার্তা দেবেন পরিবেশ দূষণ রোধ করার। শুক্রবার ভ্যান চালিয়ে কুলটি হয়ে বাংলার সীমানা অতিক্রম করে ঝাড়খণ্ডে প্রবেশ করেছেন তিনি। ভ্যানটিকে পরিবেশ সচেতনতার নানা বার্তা লিখে সাজিয়েছেন দুলাল। মাথার উপর দিয়েছেন ছাউনি। পরিবেশ রক্ষার বার্তা সম্বলিত বক্তব্য মানুষকে শোনানোর জন্য ব্যবস্থা করেছেন বক্সের। তাতে অনবরত বেজে চলেছে পরিবেশ রক্ষার বার্তা। ভ্যানের ছাউনির নীচেই অস্থায়ী রান্নাঘর, বিশ্রামের ব্যবস্থা। 


    ভ্যানে বসেই দুলাল বিশ্বাস বললেন, ৭৮ বছর তো হল। যে কোনও দিন মরে যাব। পুণ্য লাভের আকাঙ্খা আমার নেই। আমার একটাই আক্ষেপ, কতজন মানুষকেই বা আর পরিবেশ নিয়ে সচেতন করতে পারলাম! আমি কুম্ভ যাচ্ছি স্নান করতে নয়, ওখানে বহু মানুষকে একসঙ্গে পাব। তাঁদের দূষণের খারাপ দিকগুলি বোঝাব। কিছুজন মানুষকেও যদিও মহাকুম্ভ প্রাঙ্গণে পরিবেশ নিয়ে সচেতন করতে পারি তা হলেই আমার পুণ্যলাভ হবে। স্ত্রী সঙ্গে কেন? দুলালবাবু শুকনো মুখে দাবি, এই বয়সে ওকে কোথায় ফেলে আসব। তাই আমার সঙ্গেই চলুক। মহাকুম্ভ বিশ্বের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবে মেতে উঠেছে আসমুদ্র হিমাচল। কোটি কোটি মানুষ পুণ্যস্নান করছেন। মুক্তি লাভের আশায় ট্রেনে, প্লেনে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ যাচ্ছেন। সবাই যখন পুণ্য করতে কুম্ভের পথে, তখন শুধু মাত্র পরিবেশকে ভালো রাখার তাগিদ দিয়ে ভ্যান চালিয়ে সেখানে যাচ্ছেন বাঁকাবাবু। যদিও ‘বাবু’ শব্দে তাঁর প্রবল আপত্তি। তিনি বলেন, আমি আবার বাবু কবে হলাম। আমি সামান্য দর্জি। পোশাক সেলাই করে সারা জীবন সংসার চালিয়েছি। এখন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াই পরিবেশ দূষণ নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে। এর আগে তিনি কামাখ্যাও গিয়েছেন। তিনি বলেন, ধর্মীয় স্থানগুলির প্রতি দেশবাসীর অগাধ আস্থা। সেখানেই গিয়েই মানুষকে বোঝাতে হবে যেভাবে দূষণে ঢাকছে পৃথিবী তাতে দেবস্থানগুলিও আর নিরাপদ নয়। যে পুণ্যস্নান নিয়ে আমরা মাতামাতি করছি একবার ভেবে দেখেছি কি, যে নদীর দূষণ কী পর্যায়ে পৌঁছেছে। মা গঙ্গা আমাদের পাপ নিচ্ছেন। তাঁকে কমপক্ষে দূষণমুক্ত রাখার শপথ আমরা নিতে পারি না কি! আমার মতো দর্জির মাথায় যদি বিষয়টা ঢুকতে পারে, সমাজের বাকি লোকরা কেন বুঝছেন না। তাঁদের বিবেক জাগ্রত করতেই আমার এই মহাকুম্ভ যাত্রা।   -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)