• প্রসূতি মৃত্যু: কাজে ফিরলেন অভিযুক্ত জুনিয়র ডাক্তাররা
    বর্তমান | ২৫ জানুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে কাজে যোগ দিলেন প্রসূতি মৃত্যু কাণ্ডে সাসপেন্ড হওয়া সাত জুনিয়র ডাক্তার। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জুনিয়র ডাক্তাররা সাসপেনশন তুলে পড়াশোনা ও কাজ করতে দেওয়ার কাতর আর্জি জানান। সূত্রের খবর, তাতে সাড়া দিয়েছেন মানবিক মুখ্যমন্ত্রী। ঘনিষ্ঠমহল মারফত তাঁদের অবিলম্বে কাজে যোগ দেওয়ার বার্তা দিয়েছেন তিনি। বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিচারের প্রতিশ্রুতিও মিলেছে। শুক্রবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগের পাঁচ পিজিটি এবং অ্যানাসথেসিওলজি’র দু’জন পিজিটি কাজে যোগ দিয়েছেন। শীঘ্রই তাঁদের সাসপেনশনের নির্দেশনামাও প্রত্যাহার করা হবে বলে স্বাস্থ্যদপ্তরের শীর্ষস্তরীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। 


    ১৬ জানুয়ারি নবান্নে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাসপেনশনের কথা জানিয়েছিলেন। অভিযোগ, এরপরই বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা করার চেষ্টা করে বামপন্থী কিছু চিকিৎসক সংগঠন এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট। সেই ফাঁদে অবশ্য পা দেননি এই জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেন রাজ্য গঠিত গ্রিভেন্স রিড্রেসাল কমিটির সদস্যরা। কমিটির চেয়ারম্যান ডাঃ সৌরভ দত্ত বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যথেষ্ট মানবিক। সকলের কথাই ভাবেন তিনি। আমি নিশ্চিত, মেদিনীপুরে সাসপেন্ড হওয়া জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিও তিনি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল।’


    প্রসঙ্গত, ৮ জানুয়ারির রাতে ওই সাত পিজিটির বিরুদ্ধে সিনিয়রদের উপস্থিতি ছাড়াই অ্যানাসথেসিয়া দেওয়া, সিজার করার মতো বড় ও গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন করবার অভিযোগ উঠেছিল। যদিও চিকিৎসকমহলের পাল্টা দাবি, আসল কালপ্রিট স্যালাইন বা নিম্নমানের কোনও ওষুধ। মমতাকে ‘মাতৃসমা’, ‘অভিভাবক’ সম্বোধন করে জুনিয়র ডাক্তাররা এক চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘সাসপেনশনের সিদ্ধান্তে আমরা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। আমাদের বাবা-মায়ের মন ভেঙে গিয়েছে। রাজ্য এবং সার্বিকভাবে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জন্য অনুগ্রহ করে আমাদের সাসপেনশন প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক।’      


    যদিও, সিনিয়র ডাক্তাররা এখনই ছাড় পাচ্ছেন না। এদিনই দুই সিনিয়র চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি। এই দুই চিকিৎসক দিলীপ পাল ও হিমাদ্রি নায়েকের বিরুদ্ধে ডিউটির দিন হাসপাতালে না-থাকার অভিযোগ রয়েছে। সেদিনই প্রসূতিদের অপারেশন করা হয়। তদন্তকারীদের প্রশ্নে তাঁরা বিভ্রান্তিমূলক উত্তর দিয়েছেন বলে খবর। আর একজন চিকিৎসককেও আজকালের মধ্যে ডাকা হচ্ছে। হাসপাতালের ওটিতে ডিউটিতে থাকা নার্সদের সঙ্গে কথা বলে সিআইডি জানতে পারে, তিন সিনিয়র চিকিৎসকের কেউ হাজির ছিলেন না। এমনকী, হাসপাতালের অন্য ওয়ার্ডেও তাঁদের দেখা যায়নি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অফিসাররা দেখেন হাসপাতালে ঢোকার কয়েক মিনিটের মধ্যেই বেরিয়ে যাচ্ছেন তিন ডাক্তার। অথচ খাতায়কলমে বলা হয়েছিল তাঁরা অপারেশনও করেছেন। 


    তদন্তে জানা যায়, তাঁরা ওই সময় অন্য প্রাইভেট নার্সিংহোমে ছিলেন। তবে দু’জনের দাবি, ডিউটি শেষ করেই তাঁরা হাসপাতাল ছেড়েছিলেন। ওটিতে কর্তব্যরত নার্সদের বক্তব্য তাঁদের সামনে তুলে ধরতে দু’জনেই চুপ করে যান বলে খবর। চিকিৎসকদের ফোনেও ডাকা হয়েছিল। তবে তাঁরা নাকি ‘ব্যস্ত আছি’ বলে কল কেটে দেন। নার্সদের এই দাবি তাঁরা অস্বীকার করেছেন। 
  • Link to this news (বর্তমান)