• ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে জঙ্গি শিবির
    বর্তমান | ২৫ জানুয়ারি ২০২৫
  • দেবাঞ্জন দাস, কলকাতা: শেখ হাসিনা উৎখাতের পর বাংলাদেশের মাটি এখন ভারত বিরোধিতার ‘এপি সেন্টার’! তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুসের সৌজন্যে গোটা বাংলাদেশ এখন পাক গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) চারণভূমি। শুধু চারণভূমিই নয়, হাসিনার আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া ভারত বিরোধী জঙ্গি শিবির ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নতুন করে শুরু হয়েছে খোদ আইএসআই’এর তত্ত্বাবধানে। ইতিমধ্যেই ভারতের মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম সংলগ্ন বাংলাদেশ ভূখণ্ডে বড় আকারের তিনটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যে খোলা হয়েছে, সে খবর এসেছে এপারের গোয়েন্দাদের কাছে। গোপনে বাংলাদেশ সফররত আইএসআই আধিকারিকদের একটি দল ইতিমধ্যেই বান্দারবনের ক্যাম্পটি পরিদর্শন করেছে। 


    শুধু খবরই নয়, আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি) এবং হিজবুত তাহরির (হাট) ক্যাডারদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ শিবিরের স্যাটেলাইট ছবিও পেয়েছেন গোয়েন্দারা। ভারতীয় এজেন্সিগুলির কাছে সুনির্দিষ্ট খবর, ওই তিনটি ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ১২৫-১৩০ জন জঙ্গি। প্রশিক্ষণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিবিরগুলিতে প্রশিক্ষক হিসেবে রয়েছে পাক সেনার এলিট বাহিনী স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপের (এসএসজি) প্রাক্তন মেজর, সুবেদার মেজর ও নায়েব সুবেদার পদমর্যাদার আধিকারিক। ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরি, গেরিলা যুদ্ধের নানা কৌশল, একে সিরিজের রাইফেল চালনা সহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে শিবিরগুলিতে। 


    এই পর্বেই এপারের গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য এসেছে এ রাজ্যের মালদহ সংলগ্ন বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানা এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্র, ভারতীয় জাল নোট ও মাদক রাখার একটি বড়সড় স্ট্যাক ইয়ার্ড সহ জঙ্গিদের জন্য একটি ‘ট্রানজিট ক্যাম্প’ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টর জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের (ডিজিএফআই) তদারকিতে। সূত্রের খবর, শিবগঞ্জের লাগোয়া মালদহের বৈষ্ণবনগর থানার শুকদেবপুর সীমান্ত। কাঁটাতার বিহীন এই অংশে বিএসএফের তরফে বেড়া লাগোনোর প্রক্রিয়া শুরু করা মাত্রই বাংলাদেশের বিজিবি এবং গ্রামবাসীরা একযোগে তা আটকাতে নেমে পড়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলন পর্বে বাংলাদেশের পুলিস, আনসার এবং বিজিবি’র কাছ থেকে যে হাজার হাজার অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছিল, তা এখন জঙ্গিদের হেফাজতে। এপারে অশান্তি-গোলমাল পাকাতে সীমান্তের অরক্ষিত এই অংশ দিয়েই তা বাংলা তথা দেশের প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে আইএসআই। প্রসঙ্গত, ঢাকার হোলি আর্টিজান ক্যাফে হামলায় জঙ্গিরা যে সমস্ত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছিল, তা মালদহের এই অংশেরই দেওয়ানিপুর দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছিল।  


    আইএসআই’এর প্রত্যক্ষ তদারকি ও প্রশিক্ষণে ভারত সীমান্তে যে তিনটি  ক্যাম্প চলছে, তার মধ্যে আকারে সবচেয়ে বড় সিলেটের পাহাড়ি এলাকা  খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানের শিবিরটি। মেঘালয় সংলগ্ন চা-বাগান ও পাহাড় বেষ্টিত জনবসতি শূন্য এই উদ্যানে এবিটি এবং হাট ক্যাডারদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে। এই ক্যাম্পেই রয়েছে ৬০ জন। দ্বিতীয় ক্যাম্পটি হল, ত্রিপুরা সংলগ্ন ব্রাহ্মণবেড়িয়ার আখাউরা উপজেলায় তিতাস নদীর পাড়ে। এই ক্যাম্পে রয়েছে এবিটি ও হাটের ৩০-৩৫ জন ট্রেনি জঙ্গি। গোয়েন্দারা বলছেন, তৃতীয় ক্যাম্পটি রয়েছে মিজোরাম সংলগ্ন বান্দারবনের গুমদুম ইউনিয়নের দুর্গম সালি পাহাড়ে। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রায় ৪০-৪৫ জন জঙ্গি এখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।      
  • Link to this news (বর্তমান)