• গত বছরের ‘রিটার্ন’ সর্বাধিক, ক্রেতাদের বিশ্বাস বাড়িয়ে রেকর্ড লাফ সোনার দামে
    বর্তমান | ২৫ জানুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: নেতাজি জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার বন্ধ ছিল কলকাতার পাইকারি বাজার। আর শুক্রবার বাজার খোলার পরই শহরে রেকর্ড লাফ দিল সোনার দাম। বুধবার জিএসটি ছাড়াই ২৪ ক্যারেট ১০ গ্রাম সোনার দর ছিল ৮০ হাজার ৭৫০ টাকা। ওয়েস্ট বেঙ্গল বুলিয়ান মার্চেন্টস অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, এদিন সেই দাম পৌঁছে গিয়েছে ৮১ হাজার টাকায়। এর সঙ্গে ৩ শতাংশ জিএসটি ধরলে অঙ্কটা সাড়ে ৮৩ হাজার ছুঁয়ে ফেলবে। অন্যদিকে ২২ ক্যারেট গহনা সোনার দরও পৌঁছেছে ৭৭ হাজার টাকায়। আর দিল্লিতে পাকা সোনার দর? সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে ৮৩ হাজার ১০০ টাকা। 


    কেন এতটা বাড়ছে সোনা? বিশেষজ্ঞরা এর জন্য আমেরিকা-তত্ত্বকেই সামনে আনছেন। তাঁদের বক্তব্য, নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোন বাণিজ্য নীতি নিয়ে চলবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সেই দোলাচল প্রভাব ফেলছে লগ্নির বাজারে। শেয়ার বাজারের অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের তুলনামূলক নিরাপদ সেক্টরে লগ্নির দিকে ঠেলছে। আমেরিকার সুদ কমানোর সম্ভাবনাও দাম বাড়াচ্ছে হলুদ ধাতুর। 


    সোনার দাম যত বাড়ছে, ক্রেতাদের লাভ ততই বেশি—এমনটাই দাবি স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের। তাঁদের কথায়, গত পাঁচ বছরে গড়ে সোনায় বার্ষিক রিটার্ন মিলেছে ১২ শতাংশের বেশি। ২০২৪ সালে সেই রিটার্নের হার ছিল প্রায় ২৬ শতাংশ। অর্থাৎ যাঁরা সোনা কিনছেন, তাঁদের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস জন্ম নিচ্ছে যে, আগামী দিনে তাঁরা ভালো রিটার্নই পাবেন। সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডসের এমডি ও সিইও শুভঙ্কর সেন বলেন, ‘ক্রেতারা অনেক বেশি সচেতন। তাঁরা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সজাগ। ডোনাল্ড ট্রাম্প কী বাণিজ্য নীতি নেন, চীনের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য-সম্পর্ক কেমন থাকে, সেই অনিশ্চয়তা যে সোনায় প্রভাব ফেলছে, তা তাঁরা বুঝতে পারছেন। তাঁদের ধারণা, সোনার দাম ৮৫ বা ৯০ হাজারে পৌঁছতে পারে। তাই তাঁরা সোনা কিনছেন। গত সাত দিনে দাম বাড়লেও, বিক্রিবাটায় তার প্রভাব পড়েনি।’ স্বর্ণ শিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি সমর দে একই মতামত দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘বিয়ের মরশুমে বাজার চাঙ্গা আছে। দাম যে বাড়ছে ও আরও বাড়বে, তা জেনেই তাঁরা গয়না কিনতে আসছেন। দাম বৃদ্ধি নিয়ে মানসিকভাবে ক্রেতারা তৈরি।’ অঞ্জলি জুয়েলার্সের কর্ণধার অনর্ঘ উত্তীয় চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্বজুড়েই সোনার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার নয়। তার কোনও বিকল্প নেই বলেই চাহিদা বাড়ছে। আমরা বিগত তিন বছর ধরেই দেখছি, সোনায় যে রিটার্ন মিলছে। তার ধারেকাছে দাঁড়াতে পারছে না অন্য কোনও লগ্নি। শেয়ার বাজারও যে ধাক্কা খাচ্ছে, তা বিনিয়োগকারীরা দেখতে পাচ্ছেন। সেই কারণেই তাঁরা আরও বেশি করে সোনায় মজেছেন। সাধারণ ক্রেতাদের জন্য আরও একটি সুবিধা করে দিচ্ছে সোনার দর। সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, দেশে ব্যক্তিগত ঋণ প্রদানের হার কমলেও, উল্টো পথে হাঁটছে গোল্ড লোন। অর্থাৎ সোনা থাকলে, তার বিনিময়ে ঋণ পাচ্ছেন গ্রাহক। যেহেতু সোনার দাম বাড়ছে, তাই সোনার পরিমাণ স্থির রেখেও ঋণের অঙ্ক বাড়িয়ে নিতে পারছেন তাঁরা। রিটার্নের পাশাপাশি এই দিকটিও যথেষ্ট সদর্থক।’  
  • Link to this news (বর্তমান)