• আমার বাড়িও...! মিউটেশন নিয়ে বিভ্রাটে অবাক মেয়র ফিরহাদ হাকিম
    এই সময় | ২৫ জানুয়ারি ২০২৫
  • দেবাশিস দাস

    নিজের বাড়িও কি কোনওদিন অন্যের নামে মিউটেশন হয়ে যাবে! এমন আশঙ্কা খোদ কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের গলায়!

    একটি সম্পত্তির মিউটেশনে ভূতুড়ে নামের অভিযোগ শুনে শুক্রবার কলকাতা পুরসভায় মেয়রের চেয়ারে বসেই চমকে ওঠেন ফিরহাদ। এ দিন ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা শুভাশিস মুখোপাধ্যায় মেয়রকে ফোন করে জানান, তাঁর বাড়ি সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার সংলগ্ন রাজচন্দ্র সেন লেনে।

    গত জুন মাসে তাঁদের বাড়ির মিউটেশন হয়ে গিয়েছে জনৈক দুলালচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে। মেয়র তাঁকে বলেন, যাঁর নামে মিউটেশন হয়েছে, সেই ব্যক্তি নিশ্চয়ই অভিযোগকারীর জ্ঞাতি, শরিক অথবা কোনও আত্মীয় হবেন! তখন অভিযোগকারী মেয়রকে বলেন, ‘ওই নামে আমার কোনও জ্ঞাতি, শরিক,পরিজন, পরিচিত কেউ নেই।’ মেয়র বুঝতে পারেন, ওই ব্যক্তি নিশ্চিত গুরুতর সমস্যায় পড়েছেন।

    তৎক্ষণাৎ ফিরহাদ পুরসভার আধিকারিকদের কাছে জানতে চান, ‘এটা কী ভাবে সম্ভব? বাড়ি একজনের নামে, সেই বাড়ির মিউটেশন অন্যের নামে, এটা কী করে হয়?’ খানিকটা অস্বস্তিতেই পড়েন মেয়রকে ঘিরে থাকা আধিকারিকরা। সকলেই চুপ করে যান। এরপরে আক্ষেপের সুরে মেয়রকে বলতে শোনা যায়, ‘চিরদিন আমি চেয়ারে থাকব না। শেষ বয়সে আমার বাড়ির ক্ষেত্রে এই বিপদ হলে কী করব? আমার তিন মেয়ে। তারা বিদেশেই থাকে। কোনও ছেলে নেই। আমার শেষ বয়সে এই রকম সমস্যা হলে কে দৌড়াদৌড়ি করবে? যে কোনও দিন আমার বাড়ির মিউটেশনও তো অন্যের নামে হয়ে যেতে পারে!’

    পুরসভা সূত্রে খবর, মেয়রের কানে মিউটেশন নিয়ে এই রকম একটা অভিযোগের কথা পৌঁছলেও, মিউটেশনের ক্ষেত্রে এই রকম গরমিলের অভিযোগ মাঝেমধ্যেই ওঠে। সমস্যায় যাঁরা পড়েন, জট ছাড়িয়ে সমাধানে পৌঁছতে তাঁদের গলদঘর্ম হতে হয়।

    মেয়রের কথা শুনে এক পুর আধিকারিক বলেন, ‘এটা কোনও সমস্যাই নয়। উনি পুরসভার হিয়ারিংয়ে অংশ নিলে আমরা মিউটেশন সংশোধন করে দেবো।’ এরপরে মেয়র অভিযোগকারীকে পরামর্শ দেন, আগামী বুধবার পুরসভার সদর কার্যালয়ে এসে হিয়ারিংয়ে অংশ নিয়ে তিনি যেন তাঁর মিউটেশন সংশোধন করে নেন।

    কিন্তু এ ক্ষেত্রে তো তবু অভিযোগকারী জানতে পেরেছেন, তাঁর নিজের বাড়ি অন্যের নামে মিউটেশন হয়ে গিয়েছে! যদি কেউ জানতে না পারেন এই সমস্যার কথা, তা হলে কী হবে।

    যদিও এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর রাজস্ব বা বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকরা জানাতে পারেননি। এই প্রক্রিয়ায় বসত বাড়ি–সহ স্থাবর সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাওয়ার একটা প্রবল সম্ভাবনা থাকে, তা সংশ্লিষ্ট দুই বিভাগের আধিকারিকরা স্বীকার করে নেন। কী ভাবে হতে পারে এই বিভ্রাট?

    রাজস্ব বিভাগের এক আধিকারিক জানান, টেকনিক্যাল ফল্ট অর্থাৎ কোনও ভাবে কম্পিউটারে নাম এন্ট্রি করার সময়ে বিভ্রাট হয়ে থাকতে পারে। আবার সম্পত্তি হাতানোর জন্য জ্ঞাতি বা শরিকি ঈর্ষা থেকেও কোনও দালাল বা পুরসভার সঙ্গে যুক্ত কোনও অসাধু চক্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেও মোটা টাকার বিনিময়ে মিউটেশন বদলে দিয়ে থাকতে পারেন।

  • Link to this news (এই সময়)