কৌশিক দে, মালদা
পুরাতন মালদার সাহাপুর এলাকার বাইপাস রোডের ধারের জায়গা দেখতে গিয়েছিলেন ইংরেজবাজার শহরের এক ব্যবসায়ী। জমি দেখে পছন্দ হওয়ায় দালালকে বলেন, ‘গার্ডওয়াল ভেঙে মাটি ভরাট করে দিন। লক্ষ টাকার জমি কোটির দাম দেবো।’ যেমন প্রস্তাব, তেমন কাজ।
এখন পুরাতন মালদা এবং ইংরেজবাজার ব্লকের বাইপাস রোডে যত্রতত্র চলছে গার্ডওয়াল ভেঙে বেআইনি ভাবে মাটি ভরাটের কাজ। গভীর রাতে ডাম্পার আর ট্র্যাক্টরের ‘তাণ্ডব’ ঘুম কেড়েছে স্থানীয়দের। ক্ষুব্ধ হয়ে অনেকে থানায় ফোন করলে পুলিশের গাড়ি আসে বটে, তবে মুহূর্তে অন্ধকারে লুকিয়ে যায় মাটি মাফিয়ারা।
ইংরেজবাজার ব্লকের যদুপুর স্ট্যান্ড থেকে ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের বাইপাস সড়ক চলে গিয়েছে সোজা পুরাতন মালদা ব্লকের নারায়ণপুর সংলগ্ন চেঁচুমোড়ে। মূলত ইংরেজবাজার ব্লকের মধুঘাট থেকে পুরাতন মালদার নারায়ণপুর এলাকার প্রায় ১২ কিলোমিটার বাইপাস সড়কের ধারেই রয়েছে গার্ডওয়াল। এনএইচএআই কর্তৃপক্ষের ভাষায় এমবিসিবি।
অর্থাৎ মেটাল বেরিয়ার ক্রাস বেরিয়ার। লোহা এবং ইস্পাত দিয়ে তৈরি। দুই মিটার এই গার্ডওয়ালের দাম পাঁচ হাজার টাকা। প্রতিদিনই কয়েক’শো মিটার সরকারি গার্ডওয়াল ভেঙে দেওয়া হচ্ছে মাটি মাফিয়ারা এই কাজ করছে।
পাকা বাইপাস রোড তৈরি হতেই এখন বিভিন্ন চাষযোগ্য জমি প্লট করে বিক্রি করতে শুরু করেছে মাফিয়ারা। কিন্তু বাইপাস রোড থেকে ওই জমি প্রায় ১০ ফুট, কোথাও আবার ১৫ ফুট নীচে রয়েছে। রাস্তার সমান্তরাল করতে বিপুল পরিমাণ মাটি ভরাট করার প্রয়োজন। জমির দাম তিন–চারগুণ বাড়াতে তাই গার্ডওয়াল ভেঙে তছনছ করে ট্র্যাক্টরে করে মাটি ফেলছে মাফিয়ারা।
জাতীয় সড়কের বাইপাস রোডের গার্ডওয়াল ভেঙে নিচু জমির দাম বাড়াতে মাটি ভরাটের খবর পৌঁছেছে ডিএম–এর কাছে। বেআইনি মাটি ভরাট রুখতে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মালদার জেলাশাসক তথা ডিস্ট্রিক্ট রোড সেফটি কমিটির চেয়ারম্যান নীতিন সিংহানিয়া। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ১২টি অভিযোগ দায়ের করেছে পুরাতন মালদা এবং ইংরেজবাজার থানায়। তবুও মাটি মাফিয়াদের দাপিয়ে বেড়ানো ঠেকানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ।
পুরাতন মালদার ব্লকের সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাইপাস সড়ক সংলগ্ন নিত্যানন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা, সাহেব ঘোষ, বিবেক ঘোষদের বক্তব্য, ঝাঁ চকচকে রাস্তার জন্য যেখানে টোল ট্যাক্স নেওয়া হয়। সেই রাস্তার বর্তমান অবস্থা ভয়ানক। বাইপাস রোডের যত্রতত্র ছড়িয়ে রয়েছে মাটি। মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটছে। অবিলম্বে মাটি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ধরপাকড় করা হোক।’
এতে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ নষ্ট হচ্ছে। এনএইচএআই-এর মালদার প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার কুমার বিকাশ নাগ জানিয়েছেন , এই ধরনের বেআইনি কাজকে ঠেকাতে ইতিমধ্যে মালদার দু’টি থানায় ১২টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ পেট্রলিং এর পাশাপাশি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেও নজরদারি চালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তথা ডিস্ট্রিক্ট রোড সেফটি কমিটির সদস্য উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘মালদার ১২ কিলোমিটার বাইপাস সড়ক অধিকাংশ জায়গায় গার্ডওয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে। এই বাইপাস সড়ক এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় চাপ চাপ মাটি পড়ে থাকছে। জমির দাম বাড়ানোর স্বার্থে একশ্রেণির মাটি মাফিয়ারা এই কাজ করছে। সম্প্রতি জেলা ও পুলিশে প্রশাসন বৈঠক করে ধরপাকড় চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়ার বক্তব্য, ‘কোনও ভাবেই জাতীয় সড়কের বাইপাস রোডের গার্ডওয়াল ভাঙতে দেওয়া যাবে না। গার্ডওয়াল ভাঙার ক্ষেত্রে কোনও রকম অনুমতিও নেওয়া হচ্ছে না। এই বেআইনি কাজ ঠেকাতে পুলিশকে গভীর রাতেও অভিযান শুরু করতে বলা হয়েছে।’