নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: সাধারণতন্ত্র দিবসের আগে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ‘অপারেশন অ্যালার্ট’ জারি করল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। বিএসএফ সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে কড়া নজরদারি শুরু করেছে। বাংলাদেশ অশান্ত হওয়ার পর থেকে মুর্শিদাবাদ সীমান্তে বাড়তি বিএসএফ নিয়োগ করা হয়েছে। এবার সীমান্তের দায়িত্বে থাকা সব ক’টি বর্ডার আউটপোস্টকে সতর্ক করা হল। ২৩ জানুয়ারি থেকে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিএসএফকে বাড়তি সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে। এই কয়েক দিন সীমান্ত বার বার মহড়া চালাবেন জওয়ানরা। এ ছাড়াও, অরক্ষিত এলাকায় বাড়তি নজরদারি ও সতর্কতার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে প্রতিটি আউটপোস্টের দায়িত্বে থাকা কমান্ডারদের। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমান্তে ‘অপ্স অ্যালার্ট’ (অপারেশনস অ্যালার্ট) জারি থাকবে বলেই বিএসএফের তরফে জানানো হয়েছে।
সাধারণত ভোরবেলায় কিংবা রাতের দিকে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের চেষ্টা হয়। পাচারকারীরাও নানা কায়দায় এই সময়েই ভারতে বিভিন্ন জিনিস পাচার করার চেষ্টা করে। তাই রাতে অতিরিক্ত জওয়ান মোতায়েন করা হবে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আশঙ্কা, সাধারণতন্ত্র দিবসের আগে বা পরে সীমান্তের পরিস্থিতি খারাপ করার জন্য ওপার বাংলা থেকে উস্কানি আসতে পারে। মুর্শিদাবাদ জেলায় ১২৫.৩৫ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৪২.৩৫ কিলোমিটার স্থলভূমি। বাকি অংশ জল সীমানা। জেলার বেশিরভাগ সীমান্ত এলাকা সম্পূর্ণ খোলা। এইসব এলাকা দিয়েই চলে পাচার। অবৈধভাবে বহু অনুপ্রবেশকারী এপারে চলে আসে। বিএসএফ তাই বাড়তি সতর্ক।
বিএসএফের পূর্বাঞ্চলীয় কম্যান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাধারণত স্বাধীনতা দিবস, সাধারণতন্ত্র দিবসের মতো জাতীয় ছুটির আগে বিএসএফের তরফে এই ধরনের সতর্কতা জারি করা হয়। এবার এই সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। ওই সময়ে উত্তর-পূর্ব ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মহড়া চালানো হবে। এই বিষয়ে সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের ভালো করে বোঝাতে হবে।
গত কয়েকদিন ধরে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে বিএসএফের জনসংযোগ কর্মসূচি বেড়েছে। বাসিন্দাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ তৈরি করতে পারলে সীমান্ত সমস্যা অনেকটাই মিটবে বলে মনে করছেন আধিকারিকরা। তাই বিভিন্ন গ্রামে সচেতনতামূলক কর্মসূচি এবং সিভিক অ্যাকশন প্রোগ্রাম নিয়ে মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়িয়েছে তারা। মুর্শিদাবাদ জেলার এক বিএসএফ আধিকারিক বলেন, এই জেলার সীমান্তের সবথেকে বড় সমস্যা হল ভারত ও বাংলাদেশের দু’টি গ্রামের মধ্যে কোনও বিভাজন রেখা নেই। দেখা যায় একটি মাঠের এপাশে ভারত, ওপারে বাংলাদেশ। তাই খুব সহজেই দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে চোরাচালান চলতে থাকে। মানুষদের বুঝতে হবে, এগুলি সম্পূর্ণ অবৈধ কাজ। মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তোলা হচ্ছে। আমরা এই সময়ে বাড়তি নজরদারি চালাচ্ছি, যাতে কোনও পাচার এবং অনুপ্রবেশ না হয়। সাগরপাড়ার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা নুরুল হাসান শেখ বলেন, এখন সীমান্তের মাঠে সর্ষে চাষ হয়েছে। অনেক চাষি সকাল বিকেলে সেখানে কাজে যান। আমরা মাঠের দিকে গেলে দেখতে পাচ্ছি দিনরাত বিএসএফ টহল দিচ্ছে। আগে এতো টহল ছিল না। আমরা গ্রামবাসীরাও সতর্ক।