বৃদ্ধা মায়ের খোরপোসের টাকা সুদ সহ মেটানোর নির্দেশ আদালতের
বর্তমান | ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘মা‑বাবার তৈরি বাড়িতে থাকছেন, অথচ দু’বেলা দু’মুঠো খেতে দিচ্ছেন না। খোরপোসের টাকা দিচ্ছেন না। আপনার লজ্জা করছে না? আপনি তো আপনার পরিবার নিয়ে সেই বাড়িতে দিব্যি আছেন। কিন্তু বৃদ্ধা মা খোরপোসের টাকা পেতে কোর্টের দরজায় ঘুরছেন।’ খোরপোস সংক্রান্ত এক মামলায় এমনই কড়া ভাষায় ছেলেকে ভর্ৎসনা করে এক মাসের মধ্যে সুদ সহ বকেয়া সাত মাসের টাকা মায়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিল আদালত। গত ২২ জানুয়ারি শিয়ালদহের বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ওই নির্দেশ দেয়। যদিও কলকাতার বেলেঘাটা মেইন রোডের বাসিন্দা অভিযুক্ত ছেলে তাপস অধিকারী এজলাসের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হাতজোড় করে বিচারককে বলেন, ‘কিছু সমস্যার কারণেই স্যার টাকাটা মাকে দিতে পারছিলাম না। সামনের সপ্তাহের মধ্যেই পুরো টাকাটা দিয়ে দেব।’ বিচারক বলেন, ‘টাকা দেবেন খুব ভালো কথা। কিন্তু নিজের বাড়ি থাকতেও কেন তিনি অন্যত্র থাকবেন?’ উত্তরে কাঁচুমাচু হয়ে ওই যুবক বলেন, ‘আশা করছি, সমস্যা মিটে যাবে। মাকে নিয়ে শীঘ্রই বাড়ি ফিরতে পারব।’ বিচারকের মন্তব্য, ‘বাড়ির বৃদ্ধা মা‑বাবাকে কখনও অবহেলা কররেন না। তাতে আপনার ভালো হতে পারে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনুন।’ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খোরপোসের টাকা মেটানো হয়ে গেলে সেই মর্মে কোর্টে রিপোর্ট পেশেরও নির্দেশ দেন বিচারক।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ১১ বছর আগে বেলেঘাটা মেইন রোডের বাসিন্দা বৃদ্ধা স্বপ্না অধিকারীর স্বামী গত হন। অভিযোগ, তারপর থেকেই নানা কারণে ছেলে‑বউমা স্বপ্নাদেবীকে ঠিকমতো দেখাশোনা করছিলেন না। এরপরই তিনি অভিমানে বাড়ি ছেড়ে মানিকতলার বাগমারিতে মেয়ে‑জামাইয়ের কাছে চলে আসেন। গত বছরের জুন মাসে তিনি ছেলের বিরুদ্ধে খোরপোসের মামলা করেন। শুনানি শেষে আদালত এক অন্তর্বর্তী রায়ে প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা করে খোরপোস দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সেই টাকা দীর্ঘ সাতমাস ধরে না পাওয়ায় তিনি কোর্টের নজরে বিষয়টি আনেন। এরপরই বিচারক বকেয়া টাকা মেটানোর নির্দেশ দেন।