রঞ্জুগোপাল মুখোপাধ্যায়, সারেঙ্গা: ঝাড়গ্রাম ছেড়ে শনিবার বাঁকুড়ার সারেঙ্গায় ঘাঁটি গেড়েছে রয়্যাল বেঙ্গল। বাঘটি বাঁশপাহাড়ী থেকে এক রাতে প্রায় ৫০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে সারেঙ্গায় পৌঁছয়। বারিকুলের পাশাপাশি রাইপুর ও সারেঙ্গার একাধিক গ্রামে এদিন সকালে বাঘের পায়ের ছাপ লক্ষ্য করা যায়। ফলে জঙ্গলমহলজুড়েই বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়েছে। উদ্বেগে বাসিন্দারা মশাল জ্বালিয়ে রাত পাহারা দিচ্ছেন। তাঁদের হাতে লাঠিসোঁটা, ধারালো অস্ত্রও থাকছে। ফলে সাত বছর আগে লালগড়ের মতোই ঝাড়খণ্ড থেকে আসা বাঘটির পরিণতি হওয়ার আশঙ্কাও অনেকে করছেন।
রাজ্যের মুখ্য বনপাল(কেন্দ্রীয় চক্র) এস কুলান ডাইভাল বলেন, শুক্রবার রাতে বাঘটি বারিকুল থেকে সারেঙ্গায় পৌঁছয়। সারেঙ্গার জঙ্গলে সে ঘাঁটি গেড়েছে। বাঘের অবস্থান ও গতিবিধি জানতে আমরা সারেঙ্গা ও রাইপুর ব্লকের জঙ্গলে ১২টি ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নিয়েছি। বাঘকে বন্দি করতে খাঁচা পাতার ব্যাপারেও আলোচনা চলছে।
রাইপুরের বিধায়ক মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু বলেন, এদিন সারেঙ্গার নেতুরপুর অঞ্চল ও রাইপুরের সবুজদ্বীপ লাগোয়া এলাকার বেশ কিছু জায়গায় বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। বনদপ্তরের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রেখেছি। স্থানীয় পঞ্চায়েতের মাধ্যমেও বাসিন্দাদের সতর্ক করা হচ্ছে। দ্রুত বাঘটিকে যাতে ধরা যায় সেব্যাপারে বনদপ্তরের আধিকারিকদের অনুরোধ করেছি।
নেতুরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রাজু লোহার বলেন, আমাদের অঞ্চলের পড়্যাশোল ও বেনাচাপরা গ্রামের কাঁচা রাস্তায় বাঘের পায়ের ছাপ দেখা গিয়েছে। জঙ্গলের রাস্তা ধরে বাঘটি গিয়েছে। আদিবাসী অধ্যুষিত ওই এলাকায় মাইকিং করানো হয়েছে। ব্লক প্রশাসনকেও পুরো বিষয়টি জানানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সরলা মুর্মু, মনসারাম লোহার বলেন, এদিন সকালে এলাকার রাস্তাঘাটে বাঘের পায়ের ছাপ দেখার পর থেকেই আতঙ্কে রয়েছি। জঙ্গলে শালপাতা সংগ্রহ করতে যাওয়ার পথে ছাপ দেখতে পাই। পরে আশাপাশের গ্রাম থেকেও বাঘের পায়ের ছাপ দেখার কথা জানতে পারি। ভয়ে এদিন আর কেউ জঙ্গলমুখো হয়নি। গোরু, ছাগল বাড়ির বাইরে বের করার সাহস পাচ্ছি না। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, গবাদি পশু খাওয়ার জন্য বাঘটি লোকালয়ে হানা দিতে পারে।
উল্লেখ্য, এদিন সারেঙ্গার যে এলাকায় বাঘটি ঘাঁটি গেড়েছে, সেখান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে সিমলাপাল ব্লকের সীমানা। বছর সাতেক আগে সিমলাপালের পিঠাবাখড়া এলাকায় একটি বাঘ এসেছিল। পরে সেটিকে লালগড়ে বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে, লাঠিপেটা করে মেরে ফেলা হয়েছিল। ঝাড়খণ্ড থেকে আসা বাঘটিও সিমলাপাল হয়ে লালগড়ের দিকে চলে যেতে পারে বলে বনদপ্তর ও স্থানীয়রা মনে করছেন। ফলে আগের বাঘটির মতো পরিণতি হবে কি না, তা নিয়ে বনদপ্তর চিন্তায় পড়েছে।