নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: মাটির নীচে বাঙ্কার তৈরি করে মজুত করা হয়েছিল নিষিদ্ধ কাফ সিরাপ। গ্রামবাসীদের নজর এড়িয়ে একটি নয়, একাধিক বাঙ্কার তৈরি করেছিল চোরাকারবারিরা। এরকম মোট তিনটি বাঙ্কারের হদিশ পাওয়া গিয়েছে কৃষ্ণগঞ্জ থানার অন্তর্গত মাজদিয়া নাঘাটা এলাকায়। তার মধ্যে একটি অসম্পূর্ণ। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ এনে মাটির নীচে লুকিয়ে রাখা হতো। সেখান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বেই রয়েছে বাংলাদেশে সীমান্ত। পদ্মাপার থেকে অর্ডার এলেই বাঙ্কার থেকে পেটি পেটি সিরাপ বের করে পাচার করে দেওয়া হতো। শুক্রবার বিকেলে সেই বাঙ্কারের সন্ধান মেলে এবং সেখান থেকে ৬২ হাজার বোতল কাশির সিরাপ বাজেয়াপ্ত করে বিএসএফ। এর বাজারমূল্য ১ কোটি ৪০ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকা। গোটা ঘটনায় চক্ষু চড়কগাছ বিএসএফেরও। চাষের জমির মধ্যেই সেই বাঙ্কার তৈরি করা হয়েছিল। সেই জমির মালিক বর্তমানে পলাতক বলে বিএসএফ জানিয়েছে।
বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের মুখপাত্র বলেন, ‘এই সাফল্য সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানদের সতর্কতা, সাহস এবং অঙ্গীকারের প্রমাণ। চোরাকারবারের জটিল নেটওয়ার্ক সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের পাচার আটকানো যায়।’ গত শুক্রবার দুপুরে আড়াইটে নাগাদ কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়ার নাঘাটা এলাকায় সীমান্তে বিএসএফ ও পুলিস যৌথভাবে অভিযান চালায়। জঙ্গল পেরিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় অফিসারদের। মাঠের এক ধারে গর্ত খুঁড়ে বানানো হয়েছে বাঙ্কার। তার মধ্যে দু’টো বেশ বড় মাপের সেপটিক ট্যাঙ্কের মতো দেখতে। একটি বাঙ্কার রয়েছে কুঁড়েঘরের নীচে। তৃতীয়টি অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় রয়েছে। উপরে লোহার ঢাকনা। তা সরাতেই দেখা যায়, ভিতরে পেটি পেটি কাশির সিরাপের বোতল সাজানো।
বিএসএফের এক আধিকারিকের কথায়, বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক হিসেবেই এটি তৈরি করা হয়েছিল। পরে সেটিকে কাশির সিরাপ স্টোর করার জন্য বাঙ্কার হিসেবে ব্যবহার করা হতে থাকে। তবে ঘটনাস্থল থেকে কাউকেই গ্রেপ্তার করা যায়নি। জমির মালিক থেকে শুরু করে আশপাশের অনেকেই পলাতক। গ্রামবাসীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
সীমান্ত দিয়ে কাশির সিরাপ পাঠানোর ঘটনা নতুন নয়। বহু পাচারকারী হামেশাই সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার হয়। রীতিমতো সিন্ডিকেট বানিয়ে চলে পাচারের কাজ। যোগীর রাজ্য উত্তরপ্রদেশ থেকে সেই কাশির সিরাপ আনে পাচারকারীরা। আনার পথে একাধিকবার হাত বদল হয়। সম্প্রতি কৃষ্ণনগর পুলিস জেলার বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে হাজার হাজার বোতল নিষিদ্ধ কাফ সিরাপ উদ্ধার হয়েছে। বর্তমানে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেই কাশির সিরাপ এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে আনা হচ্ছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগেই ভীমপুর থানার পুলিস ২০ হাজার বোতল সিরাপ বাজেয়াপ্ত করেছিল। তদন্তে নেমে পুলিস জানতে পারে, সেই কাশির সিরাপ বেনারস থেকে আনা হয়েছিল। - নিজস্ব চিত্র