• টালিগঞ্জে ৬৬ লক্ষের ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ প্রতারণা, কৃষ্ণনগরে বিয়েবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার চক্রের মাস্টারমাইন্ড
    বর্তমান | ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: নতুন বছরের প্রথম মাসে একমাত্র বিয়ের দিন। প্রায় প্রতি পাড়ায় বাজছে সানাই। শুক্রবার ভরসন্ধ্যায় নদীয়ার কৃষ্ণনগরের এমনই এক বাড়িতে সাদা পোশাকের সাজে হাজির কলকাতা পুলিস। বরযাত্রীর বদলে ঢুকল ‘মামার বাড়ির’ গাড়ি? তাই দেখে তাজ্জব অতিথি অভ্যাগতরা। 


    ভরা বিয়ে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হল রাজ্যে ডিজিটাল অ্যারেস্ট প্রতারণা কাণ্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ডকে। পারিবারিক আত্মীয়ের বাড়ি খ্যাঁটনপুজো করতে গিয়ে পুলিসের জালে পড়ল কুমারেশ হালদার। কৃষ্ণনগরের ভালুকা গ্রামের বাসিন্দা সে। কলকাতার চিনার পার্কেও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। চারু মার্কেট থানা এলাকার এক মহিলা ব্যবসায়ীকে ডিজিটাল অ্যারেস্টের ফাঁদে ফেলে ৬৬ লক্ষ টাকার প্রতারণা মামলার প্রধান চক্রী হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। 


    গত বছর ৮ নভেম্বর চারু মার্কেট থানার দ্বারস্থ হন টালিগঞ্জ এলাকার এক মহিলা। অভিযোগ, বিমানবন্দরে তাঁর নামে আসা কুরিয়ারে নিষিদ্ধ মাদক উদ্ধার করেছে কাস্টমসের অফিসাররা। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিক পরিচয় দিয়েই ভিডিও কল করা হয় তাঁকে। অগ্রিম জামিনের জন্য প্রথম দফায় ৩০ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। আর সেটা মেটাতেই আরও বিপদে পড়েন মহিলা। আদালত জামিন মঞ্জুর করেনি, এই ভয় দেখিয়ে আরও ৩৬ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে অভিযুক্তরা। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে পুলিসে লিখিত অভিযোগ করেন ব্যবসায়ী। এরপরেই তদন্তে নেমে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ পায় পুলিস। সেই অ্যাকাউন্টেই জমা পড়ে মহিলার প্রতারিত অর্থের বেশিরভাগ অংশ। লালবাজার জানিয়েছে, সেটি কল্পনা রায় নামে এক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট। তাঁর থেকে ভাড়া নেওয়া হয়েছিল ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টটি। প্রতারণার টাকা সেই অ্যাকাউন্টেই জমা পড়ত। বদলে কল্পনাদেবী প্রতি লেনদেনের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ করে কমিশন পেতেন। জেরায় বেরিয়ে আসে প্রতারণার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকা তিনটি নাম— প্রতাপ রায়, উৎপল সিকদার ও কুমারেশ হালদার। প্রত্যেকেই নদীয়ার কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা। প্রতাপ ও উৎপলকে আগেই গ্রেপ্তার করে পুলিস। কিন্তু, পাত্তা পাওয়া যাচ্ছিল না কুমারেশের। ধৃতদের জেরায় তদন্তকারীরা জানতে পারেন চিনার পার্কে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। বিধাননগর কমিশনারেটের সদস্যদের নিয়ে সেখানেই হানা দেয় পুলিস। কিন্তু, সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। এরপরে মোবাইল লোকেশনের সূত্র ধরে জানা যায়, কৃষ্ণনগরেই রয়েছে কুমারেশ। সেখানে বিয়েবাড়িতে হানা দিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার  ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যাকাউন্ট থেকে ৮ লক্ষ ৪০ হাজার মিলেছে। কুমারেশকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, প্রতারিত অর্থ নগদে জমা রাখার দায়িত্ব ছিল উৎপলের। তার বাড়িতে হানা দিয়ে মোট ৭৪ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিস।
  • Link to this news (বর্তমান)