• বিচারপতির ৪০% পদই শূন্য, নিয়োগের দাবিপত্র সিজেআইকে
    এই সময় | ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: বিচারপতির শূন্য পদের নিরিখে শতাংশের বিচারে দেশে তৃতীয় স্থানে পৌঁছে গিয়েছে দেশের প্রাচীনতম বিচারালয়, কলকাতা হাইকোর্ট। ২০২২–এর পরে এই হাইকোর্টে আইনজীবীদের মধ্যে থেকে বিচারপতি নিয়োগে ছাড়পত্র দেয়নি কেন্দ্র। সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম কিছু নাম সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকে পাঠালেও সেই তালিকা ঠান্ডাঘরেই বন্দি। এই অবস্থায় ২৯টি শূন্যপদে বিচারপতি নিয়োগের জন্যে এ বার আইনজীবীরা গণস্বাক্ষর করে চিঠি পাঠালেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে। একই দাবি জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর কাছেও।

    এলাহাবাদে বিচারপতি পদের ৫০ শতাংশ এই মুহূর্তে শূন্য। তার পরে সবচেয়ে বেশি শূন্য পদ দিল্লি এবং কলকাতা হাইকোর্টে, যথাক্রমে ৪১ এবং ৪০ শতাংশ। শূন্য পদগুলিতে কতদিনে বিচারপতি নিয়োগ হবে, তা নিয়ে অন্ধকারে কলকাতা হাইকোর্টের বিচার বিভাগের কর্তারাও। কলকাতায় বিচারপতি নিয়োগের জন্যে লড়াই অবশ্য নতুন নয়। এর আগে টানা প্রায় আড়াই মাস কর্মবিরতি করে আইনজীবীরা কেন্দ্রকে কিছুটা নাড়া দিতে পেরেছিলেন।

    ২০১৬ নাগাদ তৎকালীন কলকাতা হাইকোর্টের এক বিচারপতি একটি মামলা দায়েরের পরে সময় মতো শুনতে না পারায় মামলাকারীর হেনস্থার জন্যে রায়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন বিচার বিভাগের তরফে। মামলা সময়ে শুনতে না পারার জন্যে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্টকে বঞ্চনা করার অভিযোগও তুলেছিলেন তিনি। বিচারপতির অভাবে কী ভাবে মামলার পাহাড় জমছে হাইকোর্টে, মামলার লিখিত নির্দেশে তার উল্লেখ করে বিষয়টিকে রীতিমতো ইস্যু করে দিয়েছিলেন।

    এ বার হাইকোর্টের আইনজীবীদের বৃহত্তম সংগঠন বার অ্যাসোসিয়েশন গণস্বাক্ষর করে পাঠানো চিঠিতে জরুরি ভিত্তিতে বিচারপতি নিয়োগের দাবি তুলেছে। আগে কলকাতা হাইকোর্টে অনুমোদিত বিচারপতির পদ ছিল ৫৬টি। লোকসংখ্যার বিচারে ২০১৪–র পর ৭২টি পদের অনুমোদন হয়। আইনজীবীদের আক্ষেপ, এত বছরেও সেই ৭২ সংখ্যা কোনও দিনই ছঁুতে পারেনি কলকাতা হাইকোর্ট। বর্তমানে ৪৩ জন বিচারপতি কর্মরত রয়েছেন। আবার জেলা আদালত থেকে উন্নীত করে হাইকোর্টে নিয়োগের কোটা কার্যত পূর্ণ। হাইকোর্টের আইনজীবীদের মধ্যে থেকে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই কলকাতার সঙ্গে বঞ্চনা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আইনজীবীদের।

    কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী লোকসভায় গত বছর দেওয়া এক পরিসংখ্যানে দাবি করেছিলেন, দেশে প্রতি এক লক্ষে ২১ জন বিচারপতি রয়েছেন। যদিও হাইকোর্টের আইনজীবীদের চিঠি অনুযায়ী, এই মুহূর্তে রাজ্যে ১১ কোটি নাগরিক রয়েছেন। ফলে বাস্তবে অনুপাতের কী হাল, তা এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। আবার ল কমিশনের ১২০ তম রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি এক লক্ষ নাগরিকে ৫০ জন বিচারপতি থাকা উচিত। কিন্তু গোটা দেশে ৩৩ শতাংশ বিচারপতির পদ শূন্য। কলকাতায় আইনজীবীদের মধ্যে থেকে কলেজিয়ামের মাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগও তুলেছেন বহু আইনজীবী।

    তাঁদের মতে, হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করা আইনজীবীদের দক্ষতার নিরিখে সুপারিশ পাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে আইনমন্ত্রক রাজনৈতিক রঙে বেশি নজর দিচ্ছে। ফলে সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম সুপারিশ করে নাম পাঠালেও তা কেন্দ্রের সবুজ সংকেত পাচ্ছে না। কলকাতার আইনজীবীদের পাঠানো চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, বিচারপতির অভাবে প্রতিদিন মক্কেলদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে আইনজীবীদের। আবার বিচারপতির অভাবে মামলার শুনানি না হলে উপার্জনও হচ্ছে না তাঁদের। দেশের প্রধান বিচারপতির প্রতি তাঁদের বক্তব্য, এই অবস্থায় এক রকম মরিয়া হয়েই তাঁরা সরাসরি তাঁর কাছে আবেদন করতে বাধ্য হলেন।

  • Link to this news (এই সময়)