শীতল চক্রবর্তী, গঙ্গারামপুর
মর্গ আছে। তবে গঙ্গারামপুরের মানুষকে ময়না তদন্তের জন্য ছুটতে হয় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে বালুরঘাট সদরে। নির্মাণে ত্রুটি থাকার কারণে তা এখনও চালু করা যায়নি বলে অভিযোগ। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার মানুষের সমস্যার কথা ভেবে ১৬ বছর আগে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালের কাছে তৈরি করা হয় মর্গের বিল্ডিং। নির্মাণের পর থেকেই ভবনটি নিয়ে কোনও হেলদোল নেই প্রশাসনের। অথচ পড়ে থেকে সেটি আস্ত ‘ভূতের বাড়ি’ তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে দেওয়াল ভেঙে পড়েছে। ছাদ থেকে খসে পড়ছে চাঙড়ও।
২০০৯ সালে গঙ্গারামপুরের প্রাক্তন বিধায়ক, তথা বাম সরকারের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী নারায়ণ বিশ্বাসের উদ্যোগে ১৬ লক্ষ টাকার খরচ করে তৈরি হয়েছিল মর্গটি। তবে কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার এবং ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ-এর অভিযোগ উঠতে শুরু করে। তাই নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়।
গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার বাবুসোনা সাহা বলেন, ‘তৈরির পরে ১৬ বছর কেটে গেলেও মর্গটি আজও পিডব্লিউডিকে হস্তান্তর করা হয়নি। নির্মাণে ত্রুটি থাকার কারণে মর্গটি এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি।’ কেন হস্তান্তর করা হয়নি পূর্ত দপ্তরকে? দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মুখ্য বাস্তুকার প্রসেনজিৎ দাসগুপ্ত বলেন ‘আলোর ব্যবস্থা না থাকা ও নির্মাণে ত্রুটির কারণে মর্গটি এখনও পূর্ত দপ্তরকে হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। খুব শীঘ্রই মর্গের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ দিকে, গঙ্গারামপুর, কুশমন্ডি, হরিরামপুর এবং বংশীহারি ব্লকের বাসিন্দাদের ময়না তদন্তের জন্য বালুরঘাটে যেতে গেলে অন্তত ৬০ থেকে ৯০ কিলোমিটার পথ যেতে হয়। ফলে ময়নাতদন্তের প্রয়োজনে বালুরঘাটে যেতে গেলে গাড়ি ভাড়া অনেক পড়ে। বালুরঘাট মর্গে চাপ থাকায় ময়না তদন্তের পরে দেহ ঠিকমতো সেলাই পর্যন্ত করা হয় না বলে অভিযোগ। ফলে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেক পরিবার।
জেলার পুলিশ সুপার চিন্ময় মিত্তাল বলেছেন, ‘মর্গটি চালু হলে পুলিশেরও কাজের সুবিধা হবে। স্থানীয় ভাবে তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে এগোবে। আমাদের দিক থেকে সব রকম চেষ্টা চলছে।’ সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র। মর্গটি চালু হলে গঙ্গারামপুরের মানুষের খুব উপকার হবে, স্বীকার করেছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ দাস, তাঁর বক্তব্য, ‘মর্গ কী ভাবে দ্রুত চালু করা যায়, আলোচনা চলছে।’