• দু’টি হাতই নেই, পা দিয়ে ইভিএম টিপে বিষ্ণু এখন ভোটার আইকন
    এই সময় | ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, কোচবিহার: এক বিশেষ ভাবে সক্ষমকে ভোটার আইকন বাছল কোচবিহার জেলা প্রশাসন। দু’টো হাত না থাকায় পা দিয়েই নিয়মিত ভোট দিয়ে চলেছেন তিনি। শুধু ভোট দেওয়াই নয়, কৃষিকাজেও সাহায্য করেন পরিবারের লোকজনকে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোনওভাবেই হার মানাতে পারেনি এই যুবকটিকে। তাঁর এই লড়াইকে কুর্নিশ জানাতে প্রশাসনের তরফ থেকে তাঁকে ভোটার আইকন হিসাবে তুলে ধরা হলো।

    কোচবিহার জেলার শীতলখুচির বড়গদাইখোরা গ্রামের বাসিন্দা বিষ্ণু বর্মন (২৭)-কে শনিবার জাতীয় ভোটার দিবসে কোচবিহার ল্যান্সডাউন হলে জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনার হাত থেকে জেলার ভোটার আইকন হিসেবে পুরস্কার নিলেন। পুরস্কার গ্রহণ করে তাঁর বার্তা, দু’হাত না থাকলেও সব কাজ তিনি সমান তালে করতে পারেন। এই যুবকের জীবন সংগ্রামের কাহিনী সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে।

    ছোটবেলায় দু’হাত কাটা যাওয়ার পর এক স্কুলে তাঁকে ভর্তি নিতে চাননি শিক্ষক। যার হাত নেই, সে কী ভাবে লিখবে, একথা বলে ফিরিয়ে দেওয়া হয় অভিভাবকদের। পরবর্তীতে অন্য একটি স্কুলে গিয়ে ভর্তি হয় ছেলেটি। পা দিয়ে লিখেই উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছিলেন বিষ্ণু। এরপর কলেজে ভর্তি হলেও আর্থিক প্রতিবন্ধকতায় স্নাতকের পড়াশোনা শেষ করা যায়নি। বিষ্ণু বলেন, ‘ছোটবেলায় অভাবের কারণে বাবা–মার হাত ধরে মাত্র ৬ বছর বয়সে ইটভাটায় চলে গিয়েছিলাম। সেখানে একটি পাম্প সেট মেশিনের মধ্যে হাত ঢুকে যাওয়ায় আমার দু’টো হাতই কাটা যায়। পরে আমরা কোচবিহারের গ্রামে ফিরে আসি।’

    এরপর তাঁর আরেক লড়াই শুরু হয়। কোচবিহারে আসার পর তাঁকে ভর্তি করাতে একটি স্কুলে নিয়ে যান যুবকের বাবা–মা। কিন্তু সেই স্কুলের শিক্ষকরা তাঁকে ভর্তি নেননি। হাত ছাড়া কী ভাবে লেখা যায়, তা নিয়ে প্রশ্ন করেন শিক্ষকরা। পরে অবশ্য অন্য স্কুলে এক শিক্ষকের চেষ্টায় ভর্তি হন তিনি। আর তখন থেকেই পায়ে লেখার অভ্যাস তৈরি করে ফেলেন বিষ্ণু। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন পরীক্ষা পায়ে লিখেই দিয়েছেন তিনি।

    তবে মাধ্যমিকের সময় একজন রাইটার নিয়েছিলেন বলে তিনি জানান। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর কলেজে ভর্তি হলেও আর্থিক কারণে পড়াশোনা আর এগোয়নি। একটা সময়ে পা দিয়েই বাড়িতে বাবা-মাকে কৃষিকাজের সাহায্য করেছেন বিষ্ণু। এখন স্ত্রীর কৃষি কাজে একইভাবে সাহায্য করেন। সরকার থেকে কোনও সাহায্য না মিললেও প্রতিবন্ধী ভাতা মেলে মাসে এক হাজার টাকা। তবে তাঁর আক্ষেপ, যন্ত্রণা সব মুছে গিয়েছে ভোট দিতে মানুষকে উৎসাহিত করতে প্রশাসন তাঁকে আইকন করায়।

  • Link to this news (এই সময়)