দেশের অন্যতম সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মানে ভূষিত হয়ে আপ্লুত বাংলার ‘ঢাকি সম্রাট’ গোকুলচন্দ্র দাস। সাধারণতন্ত্র দিবসের আগের সন্ধ্যায় ঘোষিত হয়েছে দেশের পদ্মসম্মান প্রাপকদের নাম। সেই তালিকায় নাম রয়েছে গোকুলচন্দ্র দাসেরও। বছর ৫৭-এর গোকুলচন্দ্র উত্তর ২৪ পরগনার মছলন্দপুরের বিধানপল্লি এলাকার বাসিন্দা। ঢাক-শিল্পী বাংলায় অনেকেই আছেন। তবে গোকুলচন্দ্র ঢাক বাজিয়ে বিশ্বের মঞ্চে সমাদর যেমন পেয়েছেন, হাতে করে গড়েছেন মহিলা ঢাকির দলও। শনিবার যখন এই তালিকা ঘোষণা করা হয়, তখন তিনি দিল্লিতে। সেখান থেকেই আনন্দ ব্যক্ত করেছেন। জানিয়েছেন, ‘পুরুষতান্ত্রিক’ এই বাদ্যযন্ত্রকে রপ্ত করে আজ যে ভাবে মহিলারা পারদর্শী হয়ে উঠেছেন, তাতে গর্বিত তিনি।
গোকুলচন্দ্রের ঢাকের বোলে শুধু বাংলাই নয়, মেতেছে দেশ-বিদেশের মঞ্চ। উস্তাদ জ়াকির হুসেন, পণ্ডিত রবি শঙ্করের মতো তাবড় শিল্পীদের সঙ্গে অনুষ্ঠান মঞ্চে দেখা গিয়েছে বাঙালি এই ঢাকিকে। ঢাক শিল্প বাংলার ঐতিহ্যের মূর্ত প্রতীক। সেই ঢাককে গোকুলচন্দ্রের বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যাওয়া আসলে, বাংলা ও বাঙালিকেই বিশ্বের দরবারে উন্নীত করা।
ঢাকি পরিবারের ছেলে তিনি। বাবার কাছেই শেখা, ঢাক পেটায় না, ঢাক বাজাতে হয়। এটা একটা শিল্প। এক সাক্ষাৎকারে গোকুলচন্দ্রই বলেছিলেন, ‘আমার বাবা খুব নাম করা ঢাকি ছিলেন। মতি ঢাকিকে এক নামে সকলে চিনতেন। আমি বাবার সঙ্গে বহু প্রতিযোগিতায়ও গিয়েছি। বাবাকে কোনও দিন দ্বিতীয় হতে দেখিনি। বাবার হাতে বিশেষ কিছু কাজ ছিল। আমি চেষ্টা করেছি তা ধরে রাখার।’ সেই ‘রিক্থ’ই পাথেয় করে সান ফ্রান্সিসকো, শিকাগো, নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, বার্লিন-সহ একাধিক জায়গায় অনুষ্ঠান করেছেন, মঞ্চ মাতিয়েছেন। তবে তিনি এই প্রতিভাকে শুধু নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি, এলাকার মহিলাদের মধ্যেও তা ছড়িয়ে দিয়েছেন।
তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ পাওয়া গ্রামের মেয়েরা ঘর সংসার সামলে ঢাক বাজান, সেই ঢাক বাজিয়ে সংসারও টানেন। এক বার বিদেশে অনুষ্ঠান করতে গিয়েছিলেন গোকুলচন্দ্র। দেখেন, এক বিদেশিনী স্যাক্সোফোন থেকে শুরু করে আরও নানা বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছেন। তা দেখেই বাংলার এই শিল্পীর মনে হয়েছিল, এই বিদেশি মহিলা এত রকমের বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারলে, বাঙালি মেয়েরা ঢাক শিখতে পারবে না?
২০১০ সাল থেকে শতাধিক মহিলা ঢাকিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন গোকুলচন্দ্র। তাঁদের প্রতিভা নজরকাড়া। মহিলাদের সুবিধার কথা ভেবে দেড় কেজি ওজনের ঢাকও তৈরি করেছেন তিনি। বুধবার পদ্মশ্রী প্রাপক হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণা হতেই মছলন্দপুরে উৎসবের আবহ।