এ বছরের প্রজাতন্ত্র দিবসে ‘রাষ্ট্রপতি পদক’ প্রাপক দেশের পুলিশ অফিসার ও কর্মীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সেই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে যে দু’জন আইপিএস অফিসারকে যথাক্রমে ‘অসামান্য অবদান’ বা ডিস্টিংগুইশড সার্ভিস এবং ও ‘উল্লেখযোগ্য অবদান’ বা মেরিটোরিয়াস সার্ভিসের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন, বর্তমানে মালদা রেঞ্জের আইজি দীপনারায়ণ গোস্বামী ও কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য।
দু’জনেই প্রোমোটি আইপিএস! এ ছাড়াও বাংলার আরও ২০ জন পুলিশ অফিসার ও কর্মী ‘উল্লেখযোগ্য অবদান’-এর জন্য কেন্দ্রের স্বীকৃতি পাচ্ছেন।
রাজ্যের সিনিয়র আইপিএস মহলের একাংশের প্রশ্ন, কেন গত কয়েক বছর ধরে প্রজাতন্ত্র দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত পুলিশ-পদক তালিকায় বাংলার আইপিএস-রা প্রায় ব্রাত্যের তালিকায় থাকছেন?
এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ‘এই সময়’কে দু’টি বিষয় জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সচিব পর্যায়ের এক আধিকারিক। তাঁর কথায়, ‘প্রথমত, যে সব বিষয় মেনে নাম পাঠানোর কথা সেগুলো পশ্চিমবঙ্গ সরকার অধিকাংশ সময়েই মানে না। ফলে স্ত্রিনিংয়ের সময়েই বহু নাম বাতিল হয়। দ্বিতীয়ত, অনেক ক্ষেত্রে আইপিএস-দের নাম মেরিটোরিয়াস সার্ভিসের জন্য পাঠানোই হয় না। রাজ্য না পাঠালে আমাদের সত্যিই কিছু করণীয় নেই।’ তিনিই জানালেন, বাংলা থেকে গত কয়েক বছরে এমনিই আইপিএস স্তরে পদক প্রাপকের সংখ্যা কম।
কেন বাংলার আইপিএস অফিসারদের নাম বেশি সংখ্যায় পুরস্কার প্রাপকের তালিকায় আসছে না?
নবান্নের দুই শীর্ষস্থানীয় অফিসারের কাছে এমন ‘আকাল’-এর কারণ জানতে চাওয়া হলে তাঁরা জানান, মনোনয়ন পাঠানো হলেও কোনও না–কোনও কারণ দেখিয়ে তা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে— এমন নজির ভূরি ভূরি। এই প্রবণতা এখনও চলছে। তার সঙ্গে রাজনৈতিক কোনও যোগ বা স্বার্থ আছে কি না, তা নিয়ে তাঁরা সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি। যদিও পরিসংখ্যান বলছে, পুরস্কার প্রাপকের নিরিখে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগড়, গুজরাটের নাম সব সময়েই বাংলার তুলনায় অনেকটা উপরে থাকে। তবে অনেক সময়েই যে মনোনয়ন পাঠানোর ক্ষেত্রে একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে, তা একপ্রকার মেনে নিচ্ছেন এই দুই শীর্ষ আধিকারিক।
পদকের জন্য নাম পাঠানোর ক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগও উঠছে পুলিশ মহলের একাংশের মধ্যে। রাজ্যের এক শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকের পর্যবেক্ষণ, ‘ওঁরাই (প্রোমোটি আইপিএস) বেশি পাচ্ছেন ইদানীং। এতে রেগুলার রিক্রুট আইপিএসদের মনোবলে ধাক্কা লাগতে পারে।’ তাঁর ব্যাখ্যা, নন-আইপিএস স্তরে রাজ্য থেকে যে মনোনয়ন পাঠানো হচ্ছে, তার অধিকাংশটাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গ্রহণ করছে ও স্বীকৃতি দিচ্ছে। তা হলে আইপিএসদের ক্ষেত্রে কেন সেটা হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।