এই সময়: সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ককে ব্রাত্য রেখেই আগামী বিধানসভা ভোটে ঝাঁপাতে চাইছে বঙ্গ–বিজেপি! সংখ্যালঘু এলাকায় বুথ কমিটি না গড়ার সিদ্ধান্ত থেকেই সে ইঙ্গিত স্পষ্ট। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখেও এ বিষয়ে নির্দিষ্ট নিদান শোনা গিয়েছে একাধিকবার।
প্রকাশ্যেই শুভেন্দু বলেছেন, যাঁরা বিজেপিকে ভোট দেন না, বিজেপিও তাঁদের সঙ্গে নেই। তবে গেরুয়া শিবিরের অন্দরের এই রণকৌশল পুরোপুরি চ্যালেঞ্জহীন নয়। দলের একাংশ মনে করছে, সংখ্যালঘু ভোটারদের দূরে ঠেলে না দিয়ে বরং তাঁদের কাছে টানার চেষ্টা করা উচিত।
বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার দাবি, সংখ্যালঘু মানেই বিজেপি বিরোধী বলে যে ন্যারেটিভ তৈরি হয়েছে, তা ঠিক নয়। বরং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নতুন প্রজন্মের একাংশ মিসড কল দিয়ে বিজেপির সদস্যও হয়েছেন এ বার। এ বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট দিল্লিতে পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করেছেন বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য সভাপতি চালর্স নন্দী। যাতে সংখ্যালঘু ভোটারদের ব্রাত্য রাখার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করেন বঙ্গ–বিজেপি নেতৃত্ব।
বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মনে করছে, এ রাজ্যের সংখ্যালঘুরা কখনওই বিজেপির পাশে দাঁড়াবে না। তাই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় সংগঠন তৈরির চেষ্টা কার্যত পণ্ডশ্রম। তাঁদের এই তত্ত্ব ভুল প্রমাণ করতেই সক্রিয় হয়েছে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা।
সংগঠনের রাজ্য সভাপতি চালর্স নন্দীর কথায়, ‘সদস্য সংগ্রহ অভিযান করতে গিয়ে আমরা দেখেছি বর্তমান প্রজম্মের সংখ্যালঘুরা বিজেপিতে আসতে আগ্রহী। তাঁরা অনেকে আমাদের পার্টির সদস্যও হয়েছেন।’ ২০২৪–এর আগে ২০১৯–এ সদস্য সংগ্রহ অভিযান করেছিল বিজেপি। চালর্সের দাবি, এ বার বিজেপিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সক্রিয় সদস্যর সংখ্যা ২০১৯–এর তুলনায় অনেক বেড়েছে।
মুর্শিদাবাদ, মালদা, দক্ষিণ দিনাজপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলাগুলিতে বিজেপি বুথ কমিটি গড়তে না চাইলেও এই সব জেলার সংখ্যালঘুরা অনেকেই মিসড কল দিয়ে বিজেপির সদস্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংখ্যালঘু মোর্চার এক রাজ্য পদাধিকারীর।
তিনি বলেন, ‘২০১৯–এ মুর্শিদাবাদ জেলায় খুবই সামান্য সংখ্যায় সংখ্যালঘু মিসড কল দিয়ে বিজেপির সদস্য হয়েছিলেন। এ বার সেই সংখ্যাটা গতবারের নিরিখে অন্তত দশ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মালদা, দক্ষিণ দিনাজপুরের ক্ষেত্রেও একই উদাহরণ দেওয়া যায়। আমরা বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করছি দিল্লিতে পাঠানোর জন্য।’
বিগত বেশ কয়েকটি নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করে বিজেপির উপলব্ধি, বাংলায় সংখ্যালঘু ভোট এককাট্টা হয়ে তৃণমূলেই পড়ছে। অথচ হিন্দু ভোট একজোট হচ্ছে না বিজেপির পক্ষে। ফলে ভোট–বাক্সে তৃণমূলের সঙ্গে কিছুতেই যুঝে উঠতে পারছে না গেরুয়া ব্রিগেড। রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সহ–সভাপতি রাজকমল পাঠকের মন্তব্য, ‘এ রাজ্যের একশোটির বেশি আসনে সংখ্যালঘুরা নির্ণায়ক ভূমিকায়। এই আসনগুলিকে ব্রাত্য রেখে বাংলা দখলের স্বপ্ন কোনওদিন পূরণ হবে না।’
তবে মিসড কল দিয়ে যে সংখ্যালঘুরা বিজেপির সদস্য হয়েছেন, তাঁরা বিজেপিকে ভোট দেবেন কি না, তা নিয়ে অবশ্য পদ্ম–শিবিরের অন্দরে ঘোর সংশয় আছে। রাজ্য বিজেপির এক সাংগঠনিক নেতার কথায়, ‘আমাদের সংখ্যালঘু মোর্চার সদস্যরা কি সবাই বিজেপিকে ভোট দেন? আমার তো সেটা নিয়েই সংশয় আছে। সাধারণ সংখ্যালঘু ভোটার তো অনেক পরের কথা।’