এই সময়, বালি: পরপর দু’দিন যানজটে যাত্রীরা নাকাল হওয়ার পরে শনিবার নির্ঝঞ্ঝাটে কাটল বালি ব্রিজের সংস্কারের কাজ। মূলত ছুটির দিন বলে রাস্তায় মানুষের ভিড় তেমন ছিল না। ফলে বাস–সহ অন্য যানবাহনের চাপও ছিল কম। সকাল ৮টা থেকে বালি ব্রিজের উত্তরদিকের রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচলের কথা থাকলেও শুক্রবারের যানজটের অভিজ্ঞতা মনে রেখে এ দিন আগেই রাস্তা খুলে দেওয়া হয় যান চলাচলের জন্য।
জোরকদমে চলছে রেলের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজও। ২২ জানুয়ারি রাত ১২টার পর থেকে ১০০ ঘন্টার পাওয়ার ব্লক নিয়ে বালি ব্রিজ এবং সংলগ্ন আরও কয়েকটি রাস্তার ওপরের রেল ব্রিজের পুরোনো গার্ডার ও রেল ট্র্যাক পরিবর্তনের কাজ হাতে নেয় রেল কর্তৃপক্ষ।
বালিঘাট স্টেশনের পর থেকে বালি হল্ট পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রেলপথের অনেকটা প্রায় ৪০ ফুট উঁচু ইটের মজবুত গাঁথনির দেওয়ালের উপর বসানো রয়েছে ইস্পাতের গার্ডার। সেই সব ইস্পাতের গার্ডারগুলির পরিবর্তনের কাজ চলছে গত তিন দিন ধরে। গার্ডারগুলি যে নতুন কাঠামোর উপর বসানোর কাজ চলছে, সেই সিমেন্টের ঢালাই (আরসিসি) কাঠামো রেল তৈরি করেছে গত কয়েক বছর ধরে।
এখন চুড়ান্ত পর্বে পুরোনো গার্ডারগুলি খুলে স্লিপার ও ট্র্যাকগুলি ক্রেনের সাহায্যে নীচে নামিয়ে ফের নতুন গার্ডার বসানোর কাজ চলছে। রেল কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস, যে ভাবে দিন–রাত ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মীরা কাজ করছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ হবে।
এ দিকে, চার জেলার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রেলপথের পাঁচটি স্টেশনের সংযোগস্থল হওয়ার কারণে রেল ও সড়ক যোগাযোগে বালির বড় গুরুত্ব রয়েছে। তাই কাজ শুরুর আগে যেমন ডানকুনি–শিয়ালদহ রুটের সব লোকাল ট্রেন বাতিল করতে হয়েছে, তেমনই দূরপাল্লার অধিকাংশ ট্রেনকে বিকল্প চালানো হয়েছে। দুটি ট্রেনকে হাওড়া থেকে অন্য দিক দিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে।
এক দিকে গঙ্গার পশ্চিম পারে হাওড়া ও হুগলির সংযোগস্থল, অন্য দিকে গঙ্গার পূর্বে দক্ষিণেশ্বর ও বরাহনগর হয়ে কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনার সংযোগস্থল হওয়ায় ওই সব জেলার নানা গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যে যেতে যাত্রীদের বালির উপর দিয়েই যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।
এক দিকে শিয়ালদহ–ডানকুনি রেলপথে বালিঘাট, বালি হল্ট ও রাজচন্দ্রপুরের মতো তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন রয়েছে। অন্য দিকে, হাওড়া, বর্ধমান মেন ও কর্ড লাইনে বালি মেন ও বালি কর্ডের মতো স্টেশন রয়েছে। এ ছাড়াও কর্ড লাইনে বেলানগর স্টেশনও বালির মধ্যেই পড়ে। ১৬ ও ১৯ নং জাতীয় সড়ক হয়ে অন্তত ৭৫টি রুটের যাত্রীবাহী বাস বাগনান, উলুবেড়িয়া, পাঁচলা, ধুলাগড়, সলপ–সহ হুগলির চাঁপাডাঙা, জাঙ্গিপাড়া, মশাট ইত্যাদি বহু জায়গা থেকে বালি বিবেকানন্দ সেতু হয়ে এয়ারপোর্ট, নিউটাউন, গড়িয়া, কামালগাজি, বারাসত, শ্যামবাজার–সহ নানা গন্তব্যে যাচ্ছে।
দক্ষিণবঙ্গ ও পশ্চিমের অনেকগুলি জেলার মানুষদের কলকাতা বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য বালির নিবেদিতা সেতু হয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। এই কারণেই গুরুত্বপূর্ণ ডানকুনি–শিয়ালদহ রেলপথ ১০০ ঘণ্টা বন্ধ থাকায় সড়কগুলির উপর প্রবল চাপ পড়ে। এই চাপ সামলে এতগুলি সড়কের যাত্রাপথ মসৃণ রাখার কাজ সামলে দেওয়ায় আপাতত স্বস্তিতে বালি ট্র্যাফিক গার্ড–সহ হাওড়ার সিটি পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের কর্মী–আধিকারিকরা। আজ, রবিবার ২৬ জানুয়ারি ছুটির দিন হওয়ায় বড় কোনও সমস্যা হবে না বলেই আশাবাদী রেল ও রাজ্যের পুলিশ।