• অর্থ বরাদ্দে ‘জাস্ট-ইন-টাইম’ কেন্দ্রের, গিমিক বলছে রাজ্য
    এই সময় | ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
  • ‘এক দেশ, এক ভোট’, ‘এক দেশ, এক রেশন’ ব্যবস্থার মতো কি এবার কেন্দ্রীয় প্রকল্পেও এক অ্যাকাউন্ট ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে কেন্দ্র? কারণ, নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক সূত্রের খবর, কেন্দ্রের অর্থ সাহায্যে চলা প্রকল্পের টাকা এখনকার মতো আর সরাসরি রাজ্যের হাতে দেবে না নরেন্দ্র মোদীর সরকার। সেই টাকা সরাসরি জমা পড়বে উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট অথবা সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা এজেন্সি নির্দিষ্ট একটি অ্যাকাউন্টে। তা নিয়েই নতুন করে শুরু হয়েছে কেন্দ্র–রাজ্য বিতর্ক।

    রাজ্যের অভিযোগ, এমনিতেই একশো দিনের কাজ বা আবাস যোজনা প্রকল্পে বাংলার বরাদ্দ কেন্দ্র আটকে রেখেছে দীর্ঘ দিন ধরে। তার উপরে আবার এখন এক অ্যাকাউন্ট ব্যবস্থা চালু করে আসলে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর মূলে আঘাত করতে চাইছে মোদী সরকার। কেন্দ্রের নতুন ব্যবস্থা ‘জাস্ট–ইন–টাইম’ ব্যবস্থা চালু হলে, কোনও প্রকল্পের টাকায় রাজ্যের আর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। কোনও প্রকল্পে রাজ্যের অর্থ বরাদ্দ থাকলেও খরচে সরাসরি নজরদারি চালাবে কেন্দ্র।

    রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য শনিবার বলেন, ‘১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনার মতো প্রকল্পের টাকা কেন্দ্র আটকে রাখায় রাজ্য আপাতত নিজেদের অর্থেই প্রকল্পগুলি চালাচ্ছে।’ রাজ্যের শাসকদলের অভিযোগ, ভাত না দিয়ে কেন্দ্র কিল মারার গোঁসাই হতে চাইছে। রাজনৈতিক মহলের আশঙ্কা, নতুন নিয়ম চালু হলে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক আরও তলানিতে যেতে পারে। আগামী বছরের গোড়ায় বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। ভোটের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্র আবাস যোজনা এবং একশো দিনের প্রকল্পে বাংলার প্রাপ্য অর্থ ছাড়তে পারে বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে। তার আগে নতুন ব্যবস্থা চালু নিশ্চিত করতে চাইছে তারা।

    রাজ্যের বেশ কিছু প্রকল্পে কেন্দ্রেরও অর্থসাহায্য থাকে। কিছু ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ টাকা কেন্দ্র দেয়, রাজ্য দেয় ৪০ শতাংশ। আবার ৫০:৫০ কিংবা ৭০:৩০ অনুপাতেও বিভিন্ন প্রকল্প চলে। এতদিন কেন্দ্র নিজের বরাদ্দ কয়েকটি ধাপে রাজ্যকে দিত। রাজ্য টাকা খরচের হিসেব অর্থাৎ ইউটিলাইজে়শন সার্টিফিকেট (ইউসি) পাঠালে, মিলত পরের ধাপের টাকা। কেন্দ্রের নতুন নিয়ম ‘জাস্ট–ইন–টাইম’ চালু হলে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হবে। সেই অ্যাকাউন্টে প্রকল্প ধরে কেন্দ্রের বরাদ্দ টাকা জমা পড়বে। কেন্দ্রের পরে রাজ্যের টাকা জমা পড়লে তবেই সেই অ্যাকাউন্টটি সচল হবে। সেখান থেকে সরাসরি টাকা উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। আর যদি রাস্তা বা এই ধরনের কোনও প্রকল্প হয়, তা হলে প্রকল্প পিছু অ্যাকাউন্ট তৈরি করে কেন্দ্র–রাজ্যের টাকা সেখানে জমা পড়বে, খরচ হবে সেখান থেকেই।

    এখন বিভিন্ন প্রকল্প খাতে কেন্দ্রের পাঠানো টাকা সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা অর্থ দপ্তরের হাতে আসার পরে সেই ফান্ড তারা রিলিজ় করে। বিরোধীদের অভিযোগ, যে এক প্রকল্পের টাকা অনেক ক্ষেত্রেই অন্য জায়গায় ব্যবহার করা হচ্ছে। সেটা আটকাতেই কেন্দ্রের এই নজরদারি। কেন্দ্রের যুক্তি, নির্দিষ্ট প্রকল্প যাতে অর্থাভাবে থমকে না যায় সেই জন্যই এই ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। এখানে তো কেন্দ্র–রাজ্য একই অ্যাকাউন্টে তাদের বরাদ্দ পাঠাচ্ছে। তা হলে আলাদা করে নজরদারির কী আছে?

    চন্দ্রিমার স্পষ্ট বক্তব্য, ‘নজরদারি আর কী করবে? আমরা ইউসি দিলে তবেই তো টাকা দেয় ওরা। আমাদের প্রাপ্য টাকাই কেন্দ্র দিচ্ছে না। সেগুলি তো বিয়ন্ড টাইম হয়ে গিয়েছে। সেই টাকা জাস্ট–ইন–টাইমে না–দিয়ে এখন রাজনৈতিক গিমিক করছে।’ পাল্টা বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘কেন্দ্রের বঞ্চনা তৃণমূলের একটা রাজনৈতিক স্লোগান ছাড়া কিছু নয়। কেন্দ্রকেও কোথাও না কোথাও জবাবদিহি করতে হয়। ফলে তারা যদি এই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তা হলে তা যুগান্তকারীই।’

  • Link to this news (এই সময়)