এই সময়: জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের অন্যতম মুখ আশফাকুল্লা নাইয়ার বিরুদ্ধে পাশ না–করে ডিগ্রি ব্যবহারের অভিযোগে ক’দিন আগেই তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। এ বার আরজি কর আন্দোলনের আর এক মুখ তথা জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের আর এক সদস্য কিঞ্জল নন্দের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলল রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল।
সূত্রের খবর, শনিবার আরজি করের অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়ে কাউন্সিল জানতে চেয়েছে, স্নাতকোত্তর পড়ুয়া হিসেবে কত টাকা স্টাইপেন্ড পান কিঞ্জল, সিনেমা ও বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরের থেকে তিনি আগাম অনুমতি নিয়েছিলেন কি না, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের গাইডলাইন মেনে ন্যূনতম ৮০ শতাংশ উপস্থিতি তাঁর রয়েছে কি না এবং এখনও পর্যন্ত তিনি কতদিনের ছুটি নিয়েছেন। সাত দিনের মধ্যে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষকে এই সব প্রশ্নের উত্তর রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলকে জানাতে হবে।
রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের এক কর্তা শনিবার বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী পিজিটিদের ৮০ শতাংশ উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। সে কারণেই শুটিংয়ের সময় তিনি কী ভাবে পেলেন, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।’ যদিও চিঠির বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই বলেই দাবি করছেন কিঞ্জল। তাঁর কথায়, ‘চিঠির বিষয়ে কিছু জানা নেই। চিঠি পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করব।’
তবে আরজি করের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারণেই এই পদক্ষেপ বলে মনে করছেন ওই জুনিয়র ডাক্তার। তাঁর স্পষ্ট কথা, ‘নিয়ম মেনে আয়কর জমা করি। অবসর সময়ে কী করব, সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত বিষয়।’ এখানেই থেমে না থেকে তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘আমরা সন্দীপ ঘোষকে (আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ) নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছিলাম, তার কী হলো? কী করেছে মেডিক্যাল কাউন্সিল?’
কিছুদিন আগেই আশফাকুল্লা নাইয়ার বিরুদ্ধে পাশ না করেও ডিগ্রি ব্যবহার করে প্রাইভেটে চিকিৎসার অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনায় ওই জুনিয়র চিকিৎসকের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। এরপরেই পুরো ঘটনার কথা জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন আশফাকুল্লা। ওই মামলায় পুলিশি তদন্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত। এরই মধ্যে কিঞ্জলের বিষয়ে কাউন্সিল জানতে চাওয়ায় এর পিছনে রাজনীতি দেখছেন জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ।
শুরু থেকেই আরজি কর আন্দোলনের প্রথম সারিতে রয়েছেন জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের আর এক মুখ অনিকেত মাহাতো। তঁার বক্তব্য, ‘এই ঘটনার নেপথ্যে ষড়যন্ত্র রয়েছে। ভয় দেখিয়ে আন্দোলন থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’ যদিও তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। মেডিক্যাল কাউন্সিল কোনও অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইতেই পারে। তাঁর উপস্থিতিতে কোনও ঘাটতি আছে কি না, অন্য কাজের জন্য তাঁরা বাড়তি সুযোগ নিয়েছেন কি না— এ সব তাঁরা জানতে চাইতেই পারেন। এতে সমস্যা কোথায়? যাঁরা নিয়ম মেনে চলেন, তাঁদের ভয় পাওয়ার কী আছে?’ বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য অভিযোগ করেছেন, ‘এর মধ্যে প্রতিহিংসার রাজনীতি রয়েছে।’
অন্য দিকে, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের ডিউটির বিষয়ে জানতে চেয়েও এ দিন সব অধ্যক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর। ওই চিঠিতে হাসপাতালগুলির আগামী এক মাসের ডিউটি রস্টার দ্রুত জমা করার কথা বলা হয়েছে। জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্য ভবনের বিশেষ টিম যে কোনও সময়ে হাসপাতালে সারপ্রাইজ় ভিজি়টে যাবেন। রস্টারে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরা ওই সময়ে ডিউটি করছেন কি না তা দেখবেন তাঁরা। রস্টারে নাম থাকার পরেও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে হাসপাতালে না–পাওয়া গেলে তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন বিশেষ টিমের সদস্যরা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ অনুপস্থিত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেন এই পদক্ষেপ?
স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তার দাবি, ‘সম্প্রতি এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে যেখানে, বেশ কয়েকজন জুনিয়র–সিনিয়র চিকিৎসকের কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ আমরা পেয়েছি। সেই কারণেই এই পদক্ষেপ।’