• নজর কাড়েন প্রথম মহিলা ঢাকি দল গড়ে, পদ্মশ্রী সম্মান প্রাপ্তির পর বড় বার্তা দিলেন মছলন্দপুরের গোকুল  ...
    আজকাল | ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: মাত্র চার বছর বয়সে বাবার হাত ধরে ঢাকে হাতেখড়ি। কাঁধে ঢাক নিয়ে দেশ-বিদেশের বহু মঞ্চে শ্রোতাদের মন মাতিয়েছেন। গড়েছেন দেশের প্রথম মহিলা ঢাকির দল। ঢাকের বোল তুলে অবশেষে পেলেন শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান। গ্রামবাংলার প্রাচীন সংস্কৃতির ধারক ঢাকবাদক গোকুলচন্দ্র দাস পাচ্ছেন পদ্মশ্রী খেতাব। 

    উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার মছলন্দপুরের বাসিন্দা গোকুলচন্দ্র দাস। চলতি বছর পদ্মশ্রী প্রাপকদের তালিকায় তাঁর নাম ঘোষিত হয়েছে। হাবড়া শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে অখ্যাত জনপদ মছলন্দপুরের বাসিন্দা গোকুলচন্দ্র। বাবা মতিলালচন্দ্র দাস ছিলেন বাংলার প্রখ্যাত ঢাকবাদক। বাবার কাছ থেকে মাত্র চার বছর বয়সে গোকুল ঢাক বাজানোর তালিম নিয়েছেন। প্রথম থেকেই সকলে বলতেন, ‘গোকুলের হাতে ঢাক যেন কথা বলে।‘

     বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ঢাক বাজানোর খ্যাতি আশপাশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কপাল ফেরে ২০০৪ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। সেই প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন পণ্ডিত তন্ময় বসু। সেবার তিনিই গোকুলের হাতে ‘ঢাকি সম্রাটে'র খেতাব তুলে দিয়েছিলেন। পরে গোকুল তন্ময় বসুর ওয়ার্ল্ড ক্ল্যাসিকাল ব্যান্ডে ঢাক বাজিয়েছিলেন। তারপর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দেশের সীমারেখা ছাড়িয়ে গোকুল আমেরিকা, লন্ডন, নরওয়ে ও ইন্দোনেশিয়ায় ঢাক বাজিয়েছেন। গোকুলের ঢাকের বোলে শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শুনেছেন। 

    নিজের পরিচিতি বাড়তে থাকলেও, গোকুলের মাথায় ঘুরতে থাকে অন্য ভাবনা, নতুন ভাবনা। পাড়ার প্রান্তিক মহিলাদের নিয়ে তিনি গড়ে তুললেন মহিলা ঢাকির দল। গোকুলের সেই মহিলা ঢাকির দলে বর্তমানে ৯০ জন সদস্য রয়েছেন। তাঁরাও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। সঙ্গে কম-বেশি ২০০ জন পুরুষ ঢাকিও গোকুলের সঙ্গে কাজ করেন। 

    শনিবার ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পদ্মশ্রী তালিকা প্রকাশের সময় গোকুলের নাম ঘোষণা করা হয়। প্রথমে তিনি নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারেননি। গোকুলচন্দ্র বলেন, 'কোনওদিন পদ্মশ্রী পুরস্কার পাব, তা আমার স্বপ্নেও ছিল না। শনিবার সরকারের পক্ষ থেকে আমার নাম ঘোষণা করা হয়েছে শুনে আমি প্রথম বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। পরে সরকারের এক প্রতিনিধি আমাকে টেলিফোনে আমার পুরস্কার প্রাপ্তির কথা জানালেন। গ্রামবাংলার প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র ঢাককে যে ভারত সরকার মনে রেখেছে, সেই ভাবনাকে সাধুবাদ জানাই।' 

    তিনি আরও জানান, 'পণ্ডিত তন্ময় বসুর হাত ধরে আমার উঠে আসা। বাবার পরে তিনিই আমার শিক্ষাগুরু। আমার পদ্মশ্রী পুরস্কার তন্ময় বসুকে উৎসর্গ করতে চাই।'
  • Link to this news (আজকাল)