আরজি কর কাণ্ডে ক্রমেই যেন রণংদেহী আকার ধারণ করছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। আরজি কর আন্দোলনে অংশ নেওয়া চিকিৎসকদের শোকজ করা হচ্ছে। পথে নামা শিল্পীদের বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে। এরই সঙ্গে এবার সরাসরি আরজি কর নির্যতিতার মা-বাবাকেই আক্রমণ শানানোর পথে হাঁটল ঘাসফুল শিবির। নির্যাতিতার মা-বাবাকে 'যড়যন্ত্রকারীদের মুখপাত্র' আখ্যা দিয়েছেন কুণাল ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, 'আরজি করের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। কিন্তু এখন যা ঘটছে তার পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীদের মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করছেন তাঁরা।'
কুণাল ঘোষ বলেন, 'আরজি করের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কলকাতা পুলিশ দায়িত্বশীল পদক্ষেপ করেছিল। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অপরাধীকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। তাকে শাস্তি শোনানো হয়েছে। কেন ফাঁসি হল না তা সিবিআই ও বিচারকের ব্যাপার। কিন্তু যেভাবে নির্যাতিতার বাবা-মা একেকটা কথা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করছেন, তা দূর্ভাগ্যজনক। শুরু থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বলে আসছেন এই ঘটনায় দোষীদের কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে। কার ইশারায় নির্যাতিতার বাবা-মা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলছেন? আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসকের সঙ্গে যা হয়েছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষুব্ধ। নির্যাতিতার বাবা-মাকে সম্ভাব্য সব ন্যায়বিচার দেওয়ার পথ প্রশস্ত করার চেষ্টা করেছিলেন এবং তা করতে সফল হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা এখন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন কথা বলছেন। নির্যাতিতার বাবা-মা কার্যত ষড়যন্ত্রকারীদের মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন।'
উল্লেখ্য, এর আগে সঞ্জয়ের ফাঁসি চেয়ে রাজ্য সরকারের ‘অতি সক্রিয়তা’ অবাক করেছিল নির্যাতিতার বাবাকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্তের পিছনে ‘বড় খেলা’ রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন তিনি। নির্যাতিতার বাবা বলেছিলেন, 'দেখলাম মামলায় আমাদের বা সঞ্জয়কে পার্টি করা হয়নি। মামলাটি রাজ্য সরকার বনাম সিবিআইয়ের। এই অতি সক্রিয়তার কারণ জানি না। কী খেলা এর পিছনে? মমতা বড় রাজনীতিবিদ। কোনও রাজনীতি আছে নিশ্চয়ই। সে জন্য এমন নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।' এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য প্রশাসনের উদ্দেশে তোপ দেগেছে নির্যাতিতার পরিবার।
উল্লেখ্য, গত ২০ জানুয়ারি শিয়ালদা আদালতে আরজি কর মামলায় চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা শোনান বিচারক অনির্বাণ দাস। এদিকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমনা দিতে হবে সঞ্জয় রায়কে। এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি আদালতের তরফ থেকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৩ ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবনের সাজা ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন বিচারক। এদিকে বিচারক নির্দেশ দেন, নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাষ্ট্রকে। বিচারক বলেছিলেন, এই মামলা বিরলের থেকে বিরলতম নয়।