• বই-খাতার ছুটি, বুথের সামনে ভোটের লাইনে স্কুল পড়ুয়া
    এই সময় | ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
  • বিশ্বরূপ বিশ্বাস, গোয়ালপোখর

    কোনও উত্তেজনা নেই। কেউ কাউকে মারধর করছে না। পুলিশ লাগছে না। কিন্তু নির্বিঘ্নে ভোট হয়ে যাচ্ছে।

    এমনই ছবি দেখা গেল গোয়ালপোখরের স্কুলে। জাতীয় ভোটার দিবসে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে হলো শিশু সংসদ নির্বাচন। আগামী প্রজন্মের মধ্যে মূল্যবোধ তৈরি করতেই এই উদ্যোগ।

    বিভিন্ন রাজ্যে দেখা যায়, নির্বাচনে ভোটদানের হার কম। কমবয়েসিদের মধ্যে উৎসাহ দেখা যায় আরও কম। সেই ধারার বাইরে এ রাজ্য। এই পরম্পরা ধরে রাখতে স্কুল পড়ুয়ারাই দাঁড়িয়ে পড়ল নির্বাচনে, তারাই হলো ভোটার। মাসখানেক ধরে এর প্রক্রিয়া চলেছে। একমাস আগেই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়, কীভাবে চলবে এই নির্বাচনের প্রক্রিয়া। সেই মতো বেশ কয়েকজন প্রার্থী হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে পড়ে। ক্লাসে ক্লাসে চলতে থাকে প্রচার। প্রার্থীরা দেয় নানা প্রতিশ্রুতি।

    ভোটে দাঁড়িয়েছিল কেলাডান্টা হাইস্কুলের পড়ুয়া শাবনুর বেগম। বলে, ‘কয়েকদিন ধরে প্রচার চালিয়েছি। সবার কাছে ভোট চেয়েছি। বলেছি যে আমি ভোটে জিতলে স্কুল সাফ রাখব, মাঠে গাছপালা লাগাব, স্কুলছুট পড়ুয়াদের ফেরানোর উদ্যোগ নেব। আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’

    চার সপ্তাহের প্রচারের পর শনিবার ছিল ভোটগ্রহণ। সত্যিকারের ভোটকেন্দ্র যেন তৈরি করা হয়েছিল। খুদে ভোটাররা বুথের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়েছ। বুথে ঢুকে ব্যালট পেপার নিয়েছে, আঙুলে কালি লাগিয়েছে। তবে বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র ছিল না। ব্যালট ভাঁজ করে তারা ফেলেছে বাক্সে। ভোটকর্মীদের মতো কয়েকজন বুথে বসে ভোট পরিচালনা করেছেন।

    বুথের দরজায় ছিলেন একজন নিরাপত্তারক্ষীও। ভোট দিতে পেরে মহা খুশি পড়ুয়ারা। গতি হাইস্কুলের ছাত্রী, শিশু সংসদ নির্বাচনের ভোটার মিনু দাস বলে, ‘সব প্রার্থী আমার পরিচিত। আমরা একই ক্লাসে পড়ি যে। কয়েকদিন ধরে ওরা আমাদের কাছে ভোট চেয়েছে। এতদিন মা-বাবাকে দেখেছি ভোট দিয়ে আসতে। আজ আমিও ভোট দিতে পেরে খুবই আনন্দিত।’

    গোয়ালপোখরের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক ইন্দ্রজিৎ দাস বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা। শুধু প্রাইমারি স্কুলেই নয়, গোয়ালপোখরের হাইস্কুলগুলিতেও এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একদিকে যেমন জাতীয় ভোটার দিবস পালন করা হচ্ছে, অন্যদিকে পড়ুয়াদের দিয়ে সংসদ গঠন করে নির্বাচন সম্পর্কে অগ্রিম ধারণা দেওয়া হচ্ছে।’

    উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি গোলাম রসুল বলেন, ‘এই ভোটের মাধ্যমে পড়ুয়াদের নির্বাচন সম্পর্কে ধারণা অনেকটাই বেড়ে যাবে। পাশাপাশি ওরা বাড়িতে গিয়ে নিজের মা–বাবা ও অন্যান্যদের ভোট নিয়ে বলতেও পারবে।’

  • Link to this news (এই সময়)