সমীর মণ্ডল ■ মেদিনীপুর
স্কুল আছে। ছাত্রও আছে। কিন্তু শিক্ষক মাত্র একজন! তাতেই চলছে একটা প্রাথমিক স্কুল! পাঁচ–পাঁচটি ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি, সেই একজন শিক্ষকই ঘণ্টা বাজানো থেকে মিড ডে মিলের বাজার করেন। স্কুলে খেলাধুলোর প্রশিক্ষণ দেন। তার ওপর শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন সভায় যোগদান। এক কথায়, একা হাতে দশের কাজ করেন সেই শিক্ষক অমিত ভট্টাচার্য।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা-১ নম্বর ব্লকের হালদারবাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ছিলেন দু'জন। মাস তিনেক আগে এক শিক্ষক উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়ে এই স্কুলের চাকরি ছেড়ে দেন। তিনি চলে যাওয়ার পরেও এখনও ওই স্কুলে তাঁর জায়গায় নতুন শিক্ষক দেওয়া হয়নি। ফলে বর্তমানে হালদারবাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন শিক্ষক মাত্র একজন! অমিতবাবুই স্কুলের সব কাজ সামলান। তাঁরই মতে, এর ফলে কোনও কাজটাই ঠিক মতো করে হচ্ছে না।
হঠাৎ করে ওই শিক্ষক কোনও সমস্যায় পড়লে বা অসুস্থ হলে স্কুলের গেট খোলে না। সেদিন বন্ধ রাখতে হয় স্কুল। নিরুপায় হয়ে ফিরে যেতে হয় পড়ুয়াদের। প্রয়োজন হলেও ছটি নিতে পারছেন না স্কুলের একমাত্র শিক্ষক অমিতবাবু। রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে। সার্বিক ভাবে ঘাটতি হচ্ছে পড়াশোনায়। বাস্তব পরিস্থিতি হলো, ওই স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করাতে চাইছেন না অভিভাবকেরা।
স্কুলের এমন অবস্থা দেখে মুখ ফেরাচ্ছেন তাঁরা। অনেকে সরকারি স্কুলের উপর ভরসা হারিয়ে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করছেন কাছাকাছি বেসরকারি স্কুলে। সূত্রের খবর, বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক হওয়ার কারণে চলতি বছরে একজনও নতুন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়নি। এ বার ছাত্র সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৩ জনে। পাঁচটি শ্রেণির ২৩ জন পড়ুয়াকে সামলাচ্ছেন ওই একজন শিক্ষক। স্থানীয় বাসিন্দা নিশা ঘোড়ই, আনন্দ বেরাদের প্রশ্ন, একজন শিক্ষক স্কুলের এতগুলো ক্লাস সামলাবেন কী ভাবে? স্কুলের অবস্থা দেখে অনেকে ছেলেমেয়েদের আর এই স্কুলে ভর্তি করতে চাইছেন না বলেও তাঁরা জানালেন।
অমিতবাবু বললেন, ‘আসলে আমরা দু’জন ছিলাম। একজন শিক্ষক উচ্চ প্রাথমিকে সুযোগ পেয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। ফলে এখন আমি একা। প্রয়োজন হলেও ছুটির কথা বলতে পারি না। আগে থেকে জানালে হয়তো অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (এসআই) ওই দিনের মতো একজন শিক্ষক ম্যানেজ করে দেন অন্য স্কুল থেকে। পরদিন আবার যে কে সেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘এসআই–সহ সমস্ত স্তরে সমস্যার কথা বলা হলেও এখনও স্কুলে কোনও শিক্ষক দেওয়া হয়নি।’
অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (এসআইএস) কৌশিক ঘোষ বলেন, ‘একজন শিক্ষক আপার প্রাইমারিতে চলে যাওয়ার ফলে হালদারবাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দু’জন থেকে কমে একজন শিক্ষক হয়েছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা দ্রুত ওই স্কুলে একজন শিক্ষক দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি অনিমেষ দে বলেন, ‘যে সমস্ত স্কুলে এমন সমস্যা তৈরি হয়েছে, সংশ্লিষ্ট এসআই-দের (অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক) সঙ্গে কথা বলে, সেই স্কুলের তালিকা করে রাজ্যের অনুমতি নিয়ে দ্রুত শিক্ষক জোগাড় করার ব্যবস্থা করা হবে।’