এই সময়: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা নিয়ে জুনিয়র ডাক্তার সংগঠন, চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন একযোগে পথে নেমেছিল। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনা নিয়ে পথে নেমেছিলেন। নির্যাতিতার জন্য জাস্টিস চেয়ে জুনিয়র ডাক্তার, চিকিৎসক, নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অংশ পথে নামলেও পরবর্তী সময়ে আন্দোলনকারীদের একাংশ তৃণমূল সরকারের তীব্র বিরোধিতা শুরু করে।
কলকাতা পুলিশ ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দোষী সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করলেও ক্রমেই আন্দোলনকারীদের একাংশ মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে। তৃণমূলের নেতারা আন্দোলনকারীদের একাংশের এই তীব্র নবান্ন বিরোধিতার বিরুদ্ধে পাল্টা সরব হন। কিন্তু চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মীদের কোনও বড় সংগঠন সেই ভাবে তৃণমূল সরকারের হয়ে জোরদার সওয়াল করার চেষ্টা করেনি বলে তৃণমূলের একাধিক নেতার পর্যবেক্ষণ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ২০১১ সালের পর থেকে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে উন্নতি হয়েছে, যে নতুন পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে— তা নিয়েও সে ভাবে কোনও চিকিৎসক সংগঠন জোরালো প্রচার করতে পারেনি বলেও তৃণমূল কিছু নেতার পর্যবেক্ষণ। এই প্রেক্ষাপটে আগামিকাল, সোমবার রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজার উপস্থিতিতে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়ে নতুন একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করতে পারে। এই বিষয়ে শশী কোনও বিবৃতি না দিলেও তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ শনিবার বলেন, ‘চিকিৎসকদের কাছ থেকে শুনেছি, সোমবার এই বিষয়ে শশী পাঁজা সবিস্তারে জানাবেন।’ যেহেতু শশী পাঁজার উপস্থিতিতে এই সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হতে পারে, তাই এই সংগঠন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের সমর্থক হবে বলে তৃণমূল নেতাদের একাংশের পর্যবেক্ষণ।
চিকিৎসক মহলের একাংশের বক্তব্য, নতুন এই সংগঠনের নাম ‘প্রোগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশন’ হতে পারে। আনুষ্ঠানিক ভাবে সোমবার আত্মপ্রকাশ করার আগে নয়া এই সংগঠনের গঠন নিয়ে একাধিক প্রস্তুতি বৈঠক হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এই সংগঠনে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী ছাড়াও স্বাস্থ্য প্রশাসনে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা ব্যক্তিরা থাকতে পারেন। শশীর উপস্থিতিতে এই নয়া সংগঠনের আত্মপ্রকাশের পাশাপাশি এই সংগঠনের পদাধিকারী ও কমিটির সদস্যদের নামও ঘোষিত হতে পারে। উল্লেখ্য, আরজি কর আন্দোলন চলার সময়েই জুনিয়র ডাক্তারদের নতুন সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরর্স অ্যাসোসিয়েশন’ গঠিত হয়েছিল। থ্রেট কালচার নিয়ে জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্টের অভিযোগ খণ্ডন করেছিল নয়া এই সংগঠন।
রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরেই সিপিএম বা এসইউসিআই (সি) প্রভাবিত চিকিৎসক সংগঠনের পাশাপাশি তৃণমূল প্রভাবিত চিকিৎসক সংগঠন, স্বাস্থ্য কর্মী সংগঠন রয়েছে। তৃণমূলের বিধায়ক নির্মল মাজি এবং অধুনা সাসপেন্ড থাকা শান্তনু সেনের নেতৃত্বাধীন প্রোগ্রেসিভ ডক্টরর্স অ্যাসোসিয়েশনও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ফের কেন একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে, পরোক্ষে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন কুণাল।
তৃণমূলের মুখপাত্রের কথায়, ‘যখন শত্রুপক্ষ, বিরোধীপক্ষ, সর্ষের মধ্যে ঢুকে থাকা ভূত অন্তর্ঘাতমূলক, কুৎসামূলক কাজ করে, প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করা প্রয়োজন। আরজি কর–এর অভিজ্ঞতা বলছে এই কাজ করতে কিছু সংগঠন ব্যর্থ হয়েছে। এই জায়গায় কিছু ফাঁক ছিল। সেখানে স্বাধীন ভাবে কেউ কোনও সংগঠন করতে চান তো করবেন। যদি রাজ্যের ডাক্তাররা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে যাঁরা জড়িত রয়েছেন, তাঁরা যদি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চান তো নেবেন।’