• বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
  • প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের পর এবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদও রাজ্য সরকারের শীর্ষস্তরে না জানিয়েই বিজ্ঞপ্তি জারি করল। সরকার অনুমোদিত স্কুলগুলিতে ম্যানেজিং কমিটি বা পরিচালন সমিতি না থাকলে বা মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সেখানে অবিলম্বে প্রশাসক বসানোর নির্দেশ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। রাজ্যের নজরে আসার পর এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিতর্ক শুরু হতে এবং শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশে পরে তা আংশিক প্রত্যাহার করতে হয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে।

    রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, বিজ্ঞপ্তিটি গত বছর ডিসেম্বরের। সেখানে বলা হয়েছিল, ২০২২ সালের আগে যে সব স্কুলে পরিচালন সমিতির মেয়াদ শেষ হয়েছে তা আর বাড়ানো যাবে না। সেখানে দ্রুত প্রশাসক নিয়োগ করতে হবে। পরবর্তী নতুন পরিচালন সমিতি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ওই প্রশাসকই স্কুল পরিচালনার যাবতীয় কাজকর্ম দেখবেন। বিজ্ঞপ্তি জারির পর দেড় মাস কেটে গেছে। তারপরেও তা প্রত্যাহার করে নিতে হল মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে। রাজ্যের তরফে পর্ষদকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সরকার পোষিত স্কুলের পরিচালন সমিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা স্কুল শিক্ষা দপ্তরের।

    রাজ্যের বার্তা পাওয়ার পরই আগের বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। পর্ষদ সচিব সুব্রত ঘোষ জানিয়েছেন, সরকারি স্কুল, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল এবং সরকার পোষিত স্কুল— এই তিন ধরনের স্কুলের মধ্যে সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে প্রশাসক বসানোর নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। জেলা স্কুল পরিদর্শকদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। কেন এই সংশোধন সেই প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘সরকার পোষিত স্কুলের বিষয়ে যদি কোনও নির্দেশ দেওয়ার থাকে, সেটি স্কুল শিক্ষা দপ্তর থেকে দেওয়া হবে।’ তবে দপ্তর থেকে নির্দেশ আসার পরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি পর্ষদ সচিব। তাঁর কথায়, ‘বিষয়টি নজরে আসার পর পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’

    স্কুলগুলির পরিচালন সমিতিতে প্রধানশিক্ষক, জনপ্রতিনিধি এবং কয়েকজন শিক্ষাবিদ থাকেন। পরিচালন সমিতির মেয়াদ থাকে তিন বছর। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, স্কুলে প্রায় ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও পরিচালন সমিতিতে বদল হয়নি। পুরনো কমিটিরই মেয়াদ বাড়িয়ে চালানো হচ্ছে। দপ্তর থেকে ২০২১ সালের ভোটের আগেও পুরনো পরিচালন সমিতির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। সূত্রের খবর, উচ্চ প্রাথমিকের বহু চাকরিপ্রার্থী সুপারিশপত্র নিয়ে স্কুলে যোগ দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। মূলত পরিচালন সমিতির বিরুদ্ধে দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ রয়েছে বলে খবর যায় পর্ষদের কাছে। এই অবস্থায় দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা না করেই ডিসেম্বর মাসে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দেয় পর্ষদ। ফলে দপ্তরের নির্দেশ লঙ্ঘন করার অভিযোগ ওঠে। সেই কারণে ওই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের জন্য পর্ষদকে নির্দেশ দেয় শিক্ষা দপ্তর।

    এর আগে প্রাথমিক স্তরে সেমেস্টার নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। তা নিয়ে প্রশাসনিক সভায় প্রকাশ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারের শীর্ষস্তরের সঙ্গে আলোচনা না করেই কেন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ধমকও খেতে হয় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে। এর পরেই তড়িঘড়ি বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করে নেয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। এ বার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বিজ্ঞপ্তি নিয়েও রাজ্য আপত্তি জানানোর পর স্কুল শিক্ষা দপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)