ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরাচ্ছে না প্রতারকরা, চলছে অনলাইন শপিং!
বর্তমান | ২৭ জানুয়ারি ২০২৫
স্বার্ণিক দাস, কলকাতা: বাজারে একটি ৪৩ ইঞ্চি এলইডি টিভির দাম প্রায় ২৫ হাজার টাকা। আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘অফার’–এর সন্ধান করতে গিয়ে দেখলেন, একটি অজানা সংস্থা বা কোনও ব্যক্তি একেবারে নতুন ওই টিভিটি বিক্রি করছে ১৮ হাজার টাকায়। তাদের থেকে সেটি কেনার আগে একটু মনে খটকা লাগলেও আকর্ষণীয় ছাড়ে টিভিটি কিনে দেখলেন, সেটি প্রকৃত অর্থেই আসল। বিপুল ছাড় পেয়ে এবং প্রতারিত না হয়ে বেশি খুশি হবেন না। লালবাজারের গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, সেই দামী এলইডি টিভি কোনও ব্যক্তির থেকে হাতানো টাকা দিয়ে কেনা। তাই ওই লোভনীয় ছাড়ে কেনা জিনিসের ‘অপরাধে’ আপনাকে যখন তখন গ্রেপ্তার করতে পারে পুলিস। বাজেয়াপ্ত হতে পারে সাধের সেই দামী টিভিও।
কলকাতা পুলিসের পর্যবেক্ষণ, সাইবার জালিয়াতরা অপরাধের ধরণ পাল্টেছে। মূলচক্রীরা নিজেদের আড়ালে রাখতে অন্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিচ্ছে বা তাকেও অপরাধে শামিল করছে। এরপর কোনও নিরিহ মানুষের থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এরপর সঙ্গে সঙ্গে ওই টাকা দিয়ে বিভিন্ন ই–কমার্স ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে টিভি, ল্যাপটপ, মোবাইলের মতো দামী জিনিসপত্র কিনে নিচ্ছে প্রতারকরা। ফলে প্রতারিত ব্যক্তি নিজের ব্যাঙ্কে বা স্থানীয় সাইবার থানায় পৌঁছনোর আগেই টাকা গায়েব হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, অনলাইনে দামী জিনিসপত্র কেনার পর সেগুলি আকর্ষণীয় ছাড়ে বিক্রি করে দিচ্ছে প্রতারকরা। ২৫০০০ টাকার কোনও জিনিসে ৭০০০ টাকার ছাড় দিয়ে সেটি ১৮০০০ হাজার টাকায় বিক্রি করলেও জালিয়াতদের কোনও লোকশান হচ্ছে না। উল্টে তারা যেটুকু টাকা পাচ্ছে, সেটাই তাদের ‘লাভ’। বরং যাঁর কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে সেই জিনিস কেনা হয়েছে, তাঁরই ক্ষতি হচ্ছে।
সাইবার প্রতারণার পর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে মানি ট্রেল (অর্থাৎ কোথায় কোথায় টাকা ঢুকেছে) খতিয়ে দেখেন গোয়েন্দারা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, প্রতারণা করে হাতানো টাকা যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকছে, সেগুলি ভুয়ো। ফলে তার মালিকের হদিশ পেতে গিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে তদন্তকারীদের। তবে উন্নত প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এ ধরনের একাধিক চক্রের সদস্যদের এক–এক করে গ্রেপ্তার করছে লালবাজারের সাইবার থানার পুলিস। অভিযান চালানো হচ্ছে রাজ্যজুড়ে, ভিনরাজ্যেও। ধৃতদের জেরা করে এরকমই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আগে অনলাইনে প্রতারণার পর এটিএম থেকে টাকা তুলে নিত জালিয়াতরা। এদিকে, মানি ট্রেল ট্র্যাক করার পর নির্দিষ্ট এটিএমের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে সহজেই অভিযুক্তকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করে নিত পুলিস।
তাই পুলিসের হাত থেকে বাঁচতে এভাবে চালাকি করছে জালিয়াতরা। এ জন্য তারা জালিয়াতির টাকা দিয়ে কেনা টিভি, মোবাইলের ছোট–ছোট ভিডিও বানাচ্ছে, ছবি তুলছে। তারপর সেগুলি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে আপলোড করে অনলাইন মার্কেটিং করছে। ফলে যাঁরা ইন্টারনেটে ওই ধরনের কোনও জিনিস খোঁজেন, তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের টাইমলাইনে প্রতারকদের ওই ‘বুস্টেড পোস্ট’ ভেসে ওঠে। লোভনীয় ছাড় দেখে স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা সেই জিনিসটি কেনার কথা ভাবেন। লালবাজারের গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ‘বৈধ ই–কমার্স ওয়েবসাইটগুলি থেকেই অনলাইনে কেনাকাটা করুন। এছাড়া কোনও ব্যক্তি বা অজানা সংস্থা থেকে কিছু কেনার আগে ভাল করে যাচাই করে নিন। অফারের বশে এভাবে কিছু কিনলে ভবিষ্যতে আপনাকে পুলিস গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেতে পারে। কারণ, কিছু না জেনে, না বুঝে আপনিও অনলাইন জালিয়াতি চক্রের অংশ হয়ে যাবেন।’