অভিরূপ দত্ত
বাংলায় থাবা গিলাঁ বারে সিনড্রোমের। এ বার পশ্চিমবঙ্গে ২ শিশুর গিলাঁ বারে সিনড্রোম নিয়ে ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে (ICH) ভর্তি থাকার খবর মিলল। এক শিশুর বয়স ৮ বছর, সে উত্তর ২৪ পরগনার বাগুইআটির বাসিন্দা। ১২ দিন আগে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল ICH-এ। অন্য শিশুর বয়স সাত বছর, সে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের বাসিন্দা। তাকে ২৫ দিন আগে ভর্তি করা হয়েছিল। এখন ২ জনেই ভেন্টিলেশনে রয়েছে, তাদের শারীরিক পরিস্থিতি এখন সঙ্কটজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক প্রভাস প্রসূন গিরি।
এই রোগটি এক ধরনের অটো ইমিউন ডিসঅর্ডার। রেয়ার হলেও এই সংক্রমণ থেকে মৃত্যুর আশঙ্কাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক প্রভাস প্রসূন গিরি। হাত-পা দুর্বল হয়ে যাওয়া, হাঁটা-চলায় সমস্যা, শ্বাসকষ্ট-সহ একাধিক উপসর্গ দেখা যায় এমন হলে। চিকিৎসক প্রভাস প্রসূন গিরি জানিয়েছেন, প্রতি বছরেই এই রোগ দেখা যায় বাংলায়। গত বছর অক্টোবর-ডিসেম্বর নাগাদ এই সংক্রমণে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল। তবে এ বছর এই ২টি ঘটনাই তাঁর জানা প্রথম বলে জানালেন তিনি।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অনিরূদ্ধ ঘোষ জানিয়েছেন, প্রতি বছরেই এই সিনড্রোমের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা দেখা যায়। সাধারণত, যখনই কোনও ভাইরাল আউটব্রেক হয়। তার ২-৩ সপ্তাহ পরে এই গিলাঁ বারে সিনড্রোমের ঘটনা সামনে আসে। গত বছর মাম্পস সংক্রমণের বহু ঘটনা ঘটেছিল, তার পরে এই সিনড্রোমে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছিল বলে জানালেন তিনি। ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় শরীরে, সেটাই পরে কোনও কারণে শরীরের সুস্থ কোষকেও হামলা করে বসে। তখনই এই সমস্যা শুরু হয়। চিকিৎসক অনিরূদ্ধ ঘোষ জানাচ্ছেন, স্পাইনাল কর্ডের অ্যান্টিরিয়র হর্নসেলে হামলা করে। এর ফলে স্পাইনাল কর্ড থেকে যে নার্ভ বেরোয়, সেগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই নার্ভ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে সংক্রমণ কতটা গুরুতর, সেই বিষয়টি। প্রথম পায়ের পেশির সমস্যা থেকে শুরু হয়, তার পর ধীরে ধীরে ডায়াফ্রামে অ্যাটাক হয়, তেমন হলেই রোগীর শ্বাসজনিত সমস্যা শুরু হয়। তখনই ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন পড়ে রোগীর।
আগে থেকে সতর্ক থাকবেন কী ভাবে?
যদি সন্তানের পায়ে সমস্যা হয়। যদি পা দুর্বল হতে থাকে, হাঁটতে-হাঁটতে পড়ে যায়, বসে থাকা অবস্থা থেকে উঠতে সমস্যা হয়। তাহলেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অনিরূদ্ধ ঘোষের মতে, আগেভাগে সতর্ক হয়ে চিকিৎসকের কাছে এলে বড় ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।
সম্প্রতি মহারাষ্ট্রে গিলাঁ বারে সিনড্রোমে একাধিক ব্যক্তি অসুস্থ হওয়ার খবর মিলেছে। ওই রাজ্যের একজন মারাও গিয়েছেন বলে খবর মিলেছে।