• অপহরণকারীর তালিকায় ২ ইঞ্জিনিয়ার, মুক্তিপণের টাকা আদায় করেও শেষরক্ষা হল না...
    ২৪ ঘন্টা | ২৭ জানুয়ারি ২০২৫
  • চিত্তরঞ্জন দাস: চার অপহরণকারীর মধ্যে ২ জন ইঞ্জিনিয়ার। একজন আবার চাকরি করে। পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়ে ব্যবসায়ী অপহরণ কাণ্ডের তদন্তে নেমে চোখ কপালে উঠল পুলিসের। গত ১০ জানুয়ারি পশ্চিম বর্ধমান জেলার পানাগড়ের বিরুডিহার এলাকার বাসিন্দা জয়ন্ত গড়াই নামে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা হয়। সেই দিনই ৫০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। শেষে ১০ লক্ষ টাকায় রফা হয়। কিন্তু ৬ লক্ষ টাকা জয়ন্তবাবুর এক বন্ধু দিলে জয়ন্তকে কাঁকসা থানা এলাকায় বাঁশকোপা টোল প্লাজার কাছে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় অপহরণকারীরা।

    গত ১৩ জানুয়ারি জয়ন্ত গড়াই এনিয়ে বুদবুদ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তারপর থেকেই পুলিস তদন্ত শুরু করে। সি সি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে গাড়ির নম্বর বের করে গাড়ির চালককে দুর্গাপুরের কোকওভেন থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। তারপর তাকে জেরা করে বাকি চারজনের মধ্যে সুপ্রিয় খাওয়াস নামে একজনের নাগাল পায় পুলিস। সুপ্রিয় এমটেক পাস, ইসিএল কর্মী। সে এই অপহরণের সঙ্গে যোগ দেয় কারণ বাজারে তার প্রচুর টাকা দেনা হয়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি তার হাতে নেশার টাকা ছিল না। কয়েক মাস ধরে সে ডিউটিতে যোগ দেয়নি। সুপ্রিয়র পর গ্রেফতার করা হয় সোহম চ্যাটার্জী নামে একজনকে। সোহম নিউ টাউনশিপ থানা এলাকার টেটিখোলা রাঙামাটির বাসিন্দা। বিটেক করেও হাতে টাকা পয়সা ছিল না। হঠাত্ সে অপহরণের মাষ্টারমাইণ্ড সঞ্জীব বিশ্বাসের পাল্লায় পড়ে। এরপর আসা যাক সঞ্জীব বিশ্বাসের কথায়। সঞ্জীব কাঁকসা থানা এলাকার পানাগড় নতুনপাড়ার বাসিন্দা। সঞ্জীবের ফাস্ট ফুডের ঠেলা নিয়ে ব্যাবসা করত। এর আগে চুরি ছিনতাইয়ের তোলাবাজির অভিযোগ ওঠে এর বিরুদ্ধে। এই সঞ্জীব বিশ্বাসই বাকি চারজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এমনটাই পুলিসের দাবি।

    ওই পাঁচ দুষ্কৃতী একটি সুইফ্ট ডিজায়ার গাড়ি নিয়ে বুদবুদ থানা এলাকার সোঁয়াই-এর কাছে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে জয়ন্তকে আসতে বলে। সে এলেই তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে পালিয়ে যায়। জয়ন্তকে মারধর করে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে ৫০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অবশেষে ১০ লক্ষ টাকায় রফা হয়। সেইদিনই ৬ লক্ষ টাকা জয়ন্তর এক বন্ধুর পাঠায়। এরপরই অপহরণকারীরা জয়ন্তকে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বাঁশকোপার কাছে ফেলে পালিয়ে যায়। জয়ন্তবাবু একটু সুস্থ হলে ৩ দিন পর বুদবুদ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিস রাস্তার ধারে সি সি ক্যামেরার ফুটেজে গাড়ির সিম্বল দেখে গাড়ির চালক অভিজিৎ চক্রবর্তীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারপরই বাকি ৪ জনকে গ্রেফতার করে।


     


    গতকাল রাতে বুদবুদ থানায় সাংবাদিক বৈঠক করেন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি ইস্ট অভিষেক গুপ্তা। এছাড়াও ছিলেন বুদবুদ থানার ওসি মনোজিৎ ধারা, কাঁকসার এসিপি সুমন কুমার জয়সওয়াল সহ অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকরা। অভিষেক গুপ্তা জানান , কারা তাকে অপহরণ করেছিল সেই বিষয়ে তিনি সঠিক তথ্য দিতে পারছিলেন না জয়ন্ত। বুদবুদ থানার পুলিস ঘটনার তদন্তে নেমে বিভিন্ন সূত্র ধরে তদন্ত করার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে। অবশেষে প্রায় ১৩ দিনে অপহরণের ঘটনার কিনারা করে। বিভিন্ন ভাবে তদন্ত করে অবশেষে বেশ কিছু সূত্র পাওয়ার পর ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আটক করা হয় একটি মোটরসাইকেল ও একটি চারচাকা গাড়ি। উদ্ধার হয়েছে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, চার রাউন্ড গুলি, দুটি ম্যাগজিন, একটি ধারাল অস্ত্র, ১ লক্ষ ১২ হাজার টাকা ও পাঁচটি মোবাইল ফোন। ধৃতরা হলেন অভিজিৎ চক্রবর্তী, সুপ্রিয় খাওয়াস, সঞ্জীব বিশ্বাস, সোহম চ্যাটার্জি এবং বিমলেশ কুমার ঠাকুর। পুলিস জানিয়েছে ধৃতদের মধ্যে একজন ইসিএল -এ চাকরি করেন। তবে প্রাথমিকভাবে এই তথ্য পাওয়া গেলেও বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখে ঘটনার সত্যতা যাচাই করবেন। আজ ধৃত পাঁচ জনকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পেশ করে দশ দিনের পুলিসি হেফাজতের আবেদন জানায়।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)