এই সময়, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া: আপন মেজাজেই জঙ্গলমহলে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাঘ। রবিবার পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের জামতোড়িয়া বিট এলাকায় একটি পায়ের ছাপ দেখা যায়। স্থানীয়রা সেটি বাঘের বলে দাবি করলেও তা স্বীকার করেনি বন দপ্তর। তবে ও দিনই সকালে শুধু পায়ের ছাপ নয়, বাঘ দেখা গিয়েছে বলে দাবি করেছেন রানিবাঁধের বারো মাইল জঙ্গল লাগোয়া সুতান গ্রামের এক বাসিন্দা। সেখানে পাগ মার্কগুলি বন দপ্তর খতিয়েও দেখেছে। এর পর সোমবার বাঘের পায়ের ছাপের দেখা মিলল বাঁকুড়ার সারেঙ্গা এলাকায়। এ দিন সকালে সারেঙ্গার বড়দি গ্রামে চাষজমিতে একাধিক পায়ের ছাপ দেখতে পান স্থানীয়রা। সেগুলি পরীক্ষা করে দেখে বন দপ্তর।
মুখ্য বনপাল (কেন্দ্রীয় চক্র) এস কুলানডাইভেল বলেন, ‘বাঘ জঙ্গলমহলেই রয়েছে। বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া এলাকায় তার মুভমেন্ট রয়েছে। আমরা নজর রাখছি।’ বাঘ কি বন্দি করা হবে এ বার? মুখ্য বনপালের বক্তব্য, ‘সারা রাত মুভমেন্ট করছে বাঘ। সেই জন্য এখনই ক্যাপচার করার প্ল্যান নিচ্ছি না। কিন্তু ওটা আমাদের অপশনের মধ্যে রয়েছে। প্রয়োজন হলে আমরা ধরব।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণবঙ্গে বাঘ থাকছে মানে এটা আমাদের কাছে গর্বের। এখানে থাকার মতো পরিবেশ, ভালো জঙ্গল তৈরি হয়েছে। জঙ্গলের ভিতরে বাঘের খাবার জন্য বিভিন্ন জীবজন্তুও রয়েছে। ফলে বাঘের থাকার কোনও অসুবিধা হবে না।’
বাঁকুড়ায় বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে গত শুক্রবার থেকে। ওই দিন সকালে প্রথম তার একাধিক পায়ের ছাপ দেখা যায় রানিবাঁধ ব্লকের বারিকুল পঞ্চায়েতের বাগডুবি গ্রামে। শনিবার সকালে রাইপুর দুন্দার অঞ্চলের ইন্দ্রঝোড় মৌজায় সবুজদ্বীপের কাছে ও সারেঙ্গায় নেতুরপুর অঞ্চলের পড়্যাশোল গ্রামের মোরামের রাস্তায় একাধিক পায়ের ছাপ দেখা যায়। এর পর রবিবার সকালে বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যায় রানিবাঁধের বারো মাইল জঙ্গলে। শুধু তাই নয়, ওই দিন ভোরে বারো মাইল জঙ্গলের ভিতর সুতানের রাস্তায় ডোরাকাটার দর্শনও পান বলে দাবি সুতান গ্রামের বাসিন্দা শুকলাল বেসরার।
শুকলাল বলেন, ‘ভোর বেলা রানিবাঁধ থেকে মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলাম। তখন দেখি সামনে রাস্তায় বাঘ দাঁড়িয়ে আছে। আমি নেকড়ে দেখেছি, শেয়াল দেখেছি, অন্য বন্য জন্তুও দেখেছি। এটা দেখলাম সত্যিকারেরই বাঘ। সাইজ়ও বেশ বড়সড়। সঙ্গে সঙ্গে আমি বাইক ঘুরিয়ে পালিয়ে যাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাঘটা আমার দিকে শুধু তাকিয়েইছিল। কোনওরকম আক্রমণের চেষ্টা করেনি।’ পরে ওই এলাকায় একাধিক পায়ের ছাপও দেখতে পান স্থানীয়রা। সেগুলি খতিয়ে দেখে বন দপ্তরের টিম। মুখ্য বনপাল (কেন্দ্রীয় চক্র) এস কুলানডাইভেল বলেন ‘বাঘটা মানুষকে এড়িয়ে চলছে। গ্রামেও ঢুকছে না। এখনও কোথাও কোনও ক্ষতি করেনি। আমাদের পর্যাপ্ত টিম ফিল্ডে রয়েছে। প্রশাসন, পুলিশ সহযোগিতা করছে।’
এ দিকে, বাঁকুড়ার জঙ্গলে বাঘ ঘাঁটি গাড়লেও চিন্তায় রয়েছেন পুরুলিয়ার বান্দোয়ান এবং মানবাজার এলাকার মানুষ। স্থানীয়দের দাবি, রবিবার বান্দোয়ানের জামতোড়িয়া বিট এলাকায় দেখা যায় একটি পায়ের ছাপ। এটি বাঘের বলে দাবি করেন অনেকে। তবে বন দপ্তরের তরফ থেকে তা বাঘের বলে স্বীকার করা হয়নি। পুরুলিয়ার বন দপ্তরের কর্তারা জানান, বাঘ আপাতত পুরুলিয়া জেলার মধ্যে ঢোকেনি। বান্দোয়ান এবং মানবাজারের বাঁকুড়া সীমানা এলাকায় নজর রাখা হয়েছে। ট্র্যাপ ক্যামেরার মাধ্যমেও চলছে নজরদারি।