স্বাধীনতা সংগ্রামীর গ্রামে রাস্তা নেই, শিক্ষায় পিছিয়ে ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা ঠাকুরপুরা
বর্তমান | ২৮ জানুয়ারি ২০২৫
বলরাম দত্তবণিক, রামপুরহাট: প্রাইমারি স্কুল আছে, কিন্তু রাস্তা নেই। বর্ষার সময় কার্যত বন্ধ থাকে স্কুল। অন্যদিকে আপার প্রাইমারি স্কুল গড়ে উঠলেও তা আজও চালু হল না। ফলে উচ্চশিক্ষার জন্য তিন কিমি দূরের স্কুলে যেতে হয় পডুয়াদের। অনেকেই ছেলেমেয়েদের অত দুরে যেতে দিতে চান না। ফলে শিক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে স্বাধীনতা সংগ্রামীর গ্রাম রামপুরহাটের ঝাড়খণ্ড সীমানা ঘেঁষা ঠাকুরপুরা।
পাথুরে রুখাশুখা ঠাকুরপুরা এলাকায় ছিল না সেচ ব্যবস্থা। এলাকায় সুষ্ঠু চাষের ব্যবস্থার জন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন এই গ্রামের গ্রামের দুর্গা মুর্মু ও লাগোয়া সুলঙ্গা গ্রামের ব্রজ মুর্মু। গ্রামবাসীদের সংগঠিত করে ঝাড়খণ্ড থেকে বয়ে আসা ভুটকা নদীর উপর গড়েছিলেন বাঁধ। পিছিয়ে থাকা এই এলাকায় শিক্ষার বিস্তারে ১৯৭৮ সালে সরকারি জমির উপর গড়ে ওঠে প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও স্কুল যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই। পাকা রাস্তা থেকে জমির আল, বাসিন্দাদের উঠোন এবং ঝুঁকি নিয়ে বড় সেচ খাল ইত্যাদি নানা বাধা পেরিয়ে স্কুলে আসতে হয় কচিকাঁচা পড়ুয়াদের। তেমনি স্কুলে শিক্ষকও অপ্রতুল। একজম মাত্র টিআইসি এবং একজন অস্থায়ী মহিলা শিক্ষিকা রয়েছেন। টিআইসিকেই অফিসের কাজকর্ম, মিড ডে মিল থেকে পঠনপাঠন সামলাতে হয়। ফলে সেভাবে পড়াশোনার পরিবেশ নেই। বর্তমানে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি মিলিয়ে ৫৪ জন পড়ুয়া। কেউ কেউ ছেলেমেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষা দিতে ঝাড়খণ্ডের স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন। যদিও সেটাও কয়েক কিমি দূরে। এলাকার অভিভাবকরা বলেন, বহু বছর ধরেই ঠাকুরপুরা প্রাইমারি স্কুলটির এই অবস্থা। বর্ষার সময় স্কুলে যাওয়ার রাস্তা কাদায় ভরে যায়। তখন কার্যত বন্ধই থাকে স্কুল। এই গ্রামের নাম স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকলেও শিক্ষা ব্যবস্থা বেহাল। টিআইসি তথা দুর্গা মুর্মুর বংশধর তিমতি হেমব্রম বলেন, প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তার মধ্যেই যতটা পারি বাচ্চাদের পাঠদান করা হয়। তবে রাস্তা হলে পড়ুয়ার সঙ্গে আরও বাড়বে। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান প্রলয় নায়েক বলেন, ওই স্কুলে যাতায়াতের রাস্তা যাতে হয় সেটা গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে প্রাইমারির পাশেই আট বছর আগে লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে সরকারি জায়গার উপর আপার প্রাইমারি স্কুল (পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি) বিল্ডিং গড়ে উঠেছিল। কিন্তু তা আজও চালু হয়নি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় নষ্ট হতে বসেছে স্কুল ভবনের দরজা, জানালা। এদিকে এলাকায় নেই কোনও হাইস্কুল। ফলে চতুর্থ শ্রেণি পাশ করার পর তিন কিমি দূরের শালবাদরা হাইস্কুলে যেতে হয় পডুয়াদের। কেউ কেউ আবার পাঁচ কিমি দূরের ঝাড়খণ্ডের বেনেগড়িয়া গ্রামে মিশন স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়াচ্ছেন।
ঠাকুরপুরা গ্রামের বাসিন্দা তথা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য দেবুপ্রসাদ সাউ বলেন, প্রাথমিক শিক্ষায় সমানভাবে এগিয়ে গেলেও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই এলাকা পিছিয়ে পড়ছে। দুর্ঘটনার ভয়ে অনেক অভিভাবক দূরবর্তী স্কুলে বাচ্চাদের ভর্তি করাচ্ছেন না। প্রাথমিক স্কুলের রাস্তা ও আপার প্রাইমারি স্কুলটি চালু হলে এই এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল উন্নতি ঘটবে। ডিআই সুজিত সামন্ত বলেন, আমরা খোঁজ নিচ্ছি। ওখানকার এসআইয়ের থেকে রিপোর্ট নিয়ে আপার প্রাইমারিটি চালু করার ব্যবস্থা নিচ্ছি।