• আঠারোর আগে গর্ভবতী, শীর্ষে কেতুগ্রাম
    বর্তমান | ২৮ জানুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: শুধু বিয়ে নয়, নাবালিকা বধূদের মধ্যে গর্ভবতী হওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে। তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। কেতুগ্রাম-২ ব্লকে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। ১৮ বছরের আগে ২৭শতাংশ মহিলা বিয়ের পিঁড়িতে বসছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভাতার। এই ব্লকে ২৪ শতাংশ নাবালিকা বিয়ের পর গর্ভধারণ করছে। সোমবার ভাতারের ওড়গ্রামে একটি হাই মাদ্রাসার অনুষ্ঠানে গিয়ে জেলাশাসক আয়েশা রানি এ বলেন, পড়াশোনা করে মেয়েদের নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে। তারপর বিয়ের কথা ভাবতে হবে। নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে না পারলে নানা অসুবিধা হবে। ১৮বছরের আগে বিয়ে করা কখনোই উচিত নয়। জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম বলেন, ১৮ বছরের নীচে মেয়েরা গর্ভবতী হয়ে পড়লে তাদের জীবনের ঝুঁকি থাকে। প্রসব করার সময় বিপত্তি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কম বয়সে গর্ভবতী হলে শারীরিক নানা সমস্যা হতে পারে।


    প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। স্কুলে আধিকারিকরা হাজির থেকে অল্প বয়সে বিয়ে করার খারাপ দিকগুলি তুলে ধরবেন। আউশগ্রাম, কাটোয়া, মঙ্গলকোটেও নাবালিকাদের মধ্যে বিয়ে করার প্রবণতা রয়েছে। আধিকারিকরা তদন্ত করে দেখেছেন, অনেক সময় অভিভাবকরাও ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে করতে বাধ্য করেন। আগামী দিনে এরকম হয়ে থাকলে অভিভাবকদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রয়োজনে তাঁরা গ্রেপ্তার হতে পারেন। এছাড়া পাত্রপক্ষের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিয়ে করার আগে পাত্রপক্ষকেও পাত্রীর বয়স দেখতে হবে। অনেক সময় পাত্রও নাবালক অবস্থায় নাবালিকাদের বিয়ে করে। সেক্ষেত্রে দু’পক্ষের বিরু঩঩দ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 


    স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বেশ কয়েকজন প্রসূতি মারা যায়। তাদের মধ্যে অনেকেই নাবালিকা ছিলেন। এক আধিকারিক বলেন, নাবালিকাদের বিয়ে আটকাতে না পারলে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো সম্ভব হবে না। কম বয়সে বিয়ে বন্ধ করার জন্য অনেক সময় সচেতনতামূলক প্রচার করা হয়। পোস্টার বা হোডিং দিয়ে  সচেতন করার চেষ্টা চলে। তাতে তেমন লাভ হয় না। সেই কারণে এবার স্কুলগুলিতে বেশি করে প্রচার চালানোর জন্য বলা হয়েছে। শিক্ষক শিক্ষিকাদেরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হবে। কোনও ছাত্রী আচমকা স্কুলে আসা বন্ধ করে দিলে তার সম্পর্কে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের খোঁজ নিতে হবে। বিয়ের কথা জানতে পারলে তাঁদেরকে ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 


    জেলাশাসক বলেন, অভিভাবকরা জেনেশুনে অনেক সময় মেয়েদের বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। তাঁদের এই মানসিকতা বদলাতে হবে। রাজ্য সরকার মেয়েদের জন্য এখন নানা প্রকল্প এনেছে। ১৮বছরের পর বিয়ে হলে মেয়েরা রূপশ্রী প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা পাবে।
  • Link to this news (বর্তমান)