সংবাদদাতা, পুরুলিয়া: একদিন বাদেও আতঙ্ক কাটেনি সর্বেশ্বরের। ঘটনাটা মনে পড়লেই শিরদাঁড়া দিয়ে হিমেল স্রোত নেমে আসছে। বান্দোয়ানের কুইলাপাল বিটের অন্তর্গত পুকুরকাটা গ্রামে বাস সর্বেশ্বর মান্ডির। পাশেই রয়েছে লেয়াগারা, গোলাপাড়ার জঙ্গল। খানিক দূরেই রয়েছে গ্রামও। রবিবার সকালে দাঁত মাজার জন্য দাঁতন আনতে জঙ্গলে গিয়েছিলেন। সকালে এখনও ঠান্ডা থাকায় গায়ে চাদর মুড়ি দিয়েই জঙ্গলে গিয়েছিলেন তিনি। তখনও দাতন ভাঙা হয়নি। বাকিটা শোনা গেল খোদ সর্বেশ্বরবাবুর মুখেই— আচমকাই চোখ চলে যায় বনের ভিতরে। বোধহয় কুড়ি ফুট খানেক দূর হবে, জ্বলজ্যান্ত বাঘটা বসে রয়েছে। ভয়ে হাত-পা অসাড় হয়ে যাচ্ছিল। বাঘটা ভয়ঙ্কর রকম গর্জন করতে শুরু করে আমাকে দেখে। কী করব কিছু বুঝতে না পেরে গায়ের চাদরটা খুলে নিয়ে বন্ বন্ করে ঘোরাতে শুরু করি। বাঘটা তখন আরও জোরে গর্জন করতে থাকে। হাতি তাড়ানোর মতো মুখে আওয়াজ করতে থাকি। সামনের পা বাড়িয়েওছিল বাঘটা। খানিকটা পিছিয়েও ছিল। বোধহয় লাফাতে যাচ্ছিল। সেই সুযোগে দৌড় লাগাই। পালিয়ে সোজা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে পাশের পোল্ট্রি ফার্মে আশ্রয় নিয়েছিলাম। জীবনে কোনওদিন এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি। এতটা আতঙ্কিত হয়ে পড়িনি কোনওদিন। ওই আতঙ্ক থেকে কোনওভাবেই বের হতে পারছি না। বনদপ্তরের কর্মীদের ঘটনাটি জানিয়েছি।
স্থানীয় বাসিন্দা রামপদ মান্ডি বলেন, সর্বেশ্বর সকাল সাতটা নাগাদ বাঘের মুখোমুখি হয়েছিল। কোনওক্রমে পালিয়ে প্রাণে বাঁচে। তারপর থেকেই স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। যদিও সোমবার নতুন করে বাঘের অবস্থানের বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেনি বন দপ্তর। পুরুলিয়ার কংসাবতী সাউথের ডিভিসনের ডিএফও পূরবী মাহাত বলেন, নতুন করে বাঘের অবস্থানের বিষয়ে কোনও খবর পাওয়া যায়নি। স্থানীয় ওই যুবকের অভিজ্ঞতার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ডিএফও জানান, এ বিষয়ে বনদপ্তরের কাছে কোনও খবর নেই। তবে বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঘের অবস্থানের উপর নিয়মিত নজর রাখছে বনদপ্তরের কর্মীরা। জোরকদমে খোঁজ চলছে। তবে দ্রুত অবস্থান বদল করতে থাকায় বাঘের নির্দিষ্ট অবস্থান বুঝতে সমস্যায় পড়ছেন বনদপ্তরের কর্মীরা।