সৌম্য দে সরকার, মালদহ: আজ, মঙ্গলবার জাতীয় সংবাদপত্র দিবস। ১৭৮০ সালে আজকের দিনেই প্রকাশিত হয়েছিল জেমস অগাস্টাস হিকি’র বেঙ্গল গেজেট। এটিই দেশের প্রথম সংবাদপত্র হিসাবে পরিচিত। মালদহের এক গ্রন্থাগারিক সুবীরকুমার সাহা সংবাদপত্রের গুণগ্রাহীদের অন্যতম। শুধু পেশাগত কারণে নয়, সংবাদপত্রে ছাপা অক্ষরের টান তাঁকে আজও মুগ্ধ করে। তাই তিনি ধীরে ধীরে সংগ্রহ করেছেন দেশ ও বিদেশের প্রায় ৭০০টির বেশি সংবাদপত্র। জাতীয় সংবাদপত্র দিবসের আগের দিন মালদহ শহরের গ্রিনপার্ক এলাকায় নিজের বাড়িতে বসে সুবীরবাবুকে দেখা যায় তাঁর বিপুল সংখ্যক সংবাদপত্র সংগ্রহগুলিকে তুলে ধরতে।
সুবীরবাবু বলেন,রেডিওর আগে পর্যন্ত সংবাদপত্রই ছিল একমাত্র ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী গণমাধ্যম। রেডিও আবিষ্কার হওয়ার পরেও সংবাদপত্রের জনপ্রিয়তায় সামান্যতম ভাটা পড়েনি। ধীরেধীরে বৈদ্যুতিন গণমাধ্যম বা অধুনা সমাজমাধ্যম সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয়তা অর্জন করে। কিন্তু তারপরেও সংবাদপত্রের বেশকিছু বৈশিষ্ট এই প্রচারমাধ্যমকে এখনও সমাজের একটা বড় অংশের কাছে প্রাসঙ্গিক করে রেখেছে।
মালদহের এই গ্রন্থাগারিকের সংগ্রহে রয়েছে সব ক’টি বাংলা সংবাদপত্র। পাশাপাশি ত্রিপুরা, অসম থেকে প্রকাশিত বাংলা সংবাদপত্রও তিনি রেখেছেন সংগ্রহে। এর পাশাপাশি দেশের সব ইংরেজি ও হিন্দি সংবাদপত্রও গুছিয়ে রেখেছেন এই প্রৌঢ় গ্রন্থাগারিক। তাঁর মারাঠি, তামিল, তেলুগু ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলির সুবিশাল সংগ্রহ চমকে দেবে যে কোনও মানুষকে।
সুবীরবাবু বলেন, দৈনিক সংবাদপত্র ছাড়াও বিভিন্ন পাক্ষিক ও সাপ্তাহিক সংবাদপত্রও জোগাড় করেছি বিভিন্ন সময়ে। মালদহ থেকে শতাধিকবর্ষ ধরে প্রকাশিত হয়ে চলা সাপ্তাহিক সংবাদপত্র মালদহ সমাচারের ১৯৩৭ সালের একটি প্রকাশিত সংখ্যাও গুছিয়ে রেখেছি। এগুলি আমার কাছে বেদ, কোরান, বাইবেলের মতোই মূল্যবান।
জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক তথা বঙ্গরত্ন ডক্টর রাধাগোবিন্দ ঘোষ বলেন, সংবাদপত্রের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা আজও অনস্বীকার্য। একথা সত্যি যে টেলিভিশন বা অন্যান্য গণমাধ্যম মানুষের কাছে দ্রুত খবর পৌঁছে দেয়। কিন্তু একমাত্র সংবাদপত্রই যে কোনও খবরকে বিশদে ব্যাখ্যা করে মানুষের সামনে তুলে ধরে। টেলিভিশনে দেখানো খবর ইচ্ছে হলেই দেখা যাবে না। কিন্তু সংবাদপত্রে প্রকাশিত কোনও তথ্য বা খবরে যতবার ইচ্ছে চোখ বোলানো যায়। সংবাদপত্র তাই আজকের দিনেও একটি বিশ্বস্ত দলিল।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রী থেকে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ জানিয়েছেন, ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজে একবার চোখ না বোলালে দিনের শুরুটা কেমন যেন পরিপূর্ণ হয় না। তাই বাড়িতে অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মতো আজও অপরিহার্য সংবাদপত্র। তাঁরা সকলেই তারিফ করেছেন সুবীরবাবুর সংবাদপত্রের এই অনন্য সংগ্রহকে।
সুবীরবাবুর কথায়, আমার একটাই ইচ্ছে। পরবর্তী প্রজন্ম যেন অন্যান্য গণমাধ্যমের পাশাপাশি দিনে অন্তত একবার ভালোবেসে জ্ঞানার্জনের জন্য খবরের কাগজে চোখ রাখে। নিজস্ব চিত্র।