নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ: সরকারি প্রকল্প, অথচ শিবির চলছে কাউন্সিলারের বাড়ি তথা ওয়ার্ড অফিসের গ্যারেজে। সোমবার এমনই ঘটনার সাক্ষী থাকলেন ইংলিশবাজার পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। যা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। আপত্তি জানিয়েছেন বিরোধীরাও। যদিও বিষয়টির মধ্যে বিতর্কের কিছু দেখছেন না পুর চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দ নারায়ণ চৌধুরী। তিনি বলেন, ওটা দলীয় কার্যালয় নয়। ওখানে কাউন্সিলার বসেন। ওটাকে সার্ভিস সেন্টার বলা যেতে পারে। সেখানে যে কোনও দলের মানুষ আসতে পারেন।
মানুষের কাছে সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দিতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ২৪ জানুয়ারি থেকে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে নবম দুয়ারে সরকার। চলবে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মালদহে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন,সরকারি পরিষেবা পাইয়ে দেওয়ার নাম কেউ টাকা তুললে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে টাকা তোলার কোনও অভিযোগ না থাকলেও বিতর্ক এড়ানো যায়নি। বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন, সরকারি পরিষেবা প্রদানের শিবির একজন কাউন্সিলারের বাড়িতে কেন হবে।
তিন নম্বর ওয়ার্ডের দুয়ারে সরকার শিবির তাঁর ওয়ার্ড অফিসের গ্যারেজে ঘরে কেন হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তরে তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলার মণীষা সাহা মণ্ডল বলেন, এতে কোনও অসুবিধা নেই। কারণ দুয়ারে সরকার শিবির যে কোনও ক্লাব বা অফিসে হতে পারে। এখানে আমার অফিস ঘরেই হচ্ছে। আমাদের গ্যারেজ ঘরে জায়গা বেশি আছে। আমাদের কাজের সুবিধার জন্যই এখানে ক্যাম্প হচ্ছে।
বিরোধীদের কথায়, মণীষা তৃণমূল করলেও একজন নির্বাচিত কাউন্সিলার। তাঁর কাছে দলমত নির্বিশেষে মানুষ যে কোনও প্রয়োজনে যেতেই পারেন। কিন্তু তাঁর অফিসের গ্যারেজ ঘরে যদি এভাবে দুয়ারের সরকারের মতো একটি সরকারি প্রকল্পের শিবির চলে, তাহলে সেখানে অনেকেই যেতে দ্বিধাবোধ করবেন। যারা কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত নন, তাঁদের ক্ষেত্রেও একই ভাবনা কাজ করা স্বাভাবিক। বিরোধী রাজনৈতিক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিরাও সেখানে যেতে অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। তাই এই পদক্ষেপ ঠিক হয়নি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্রের কথায়, কাউন্সিলার জনপ্রতিনিধি। তিনি কোনও সরকারি পদে নেই। কাজেই সরকারি পরিষেবা প্রদানের ক্যাম্প জনপ্রতিনিধির বাড়িতে হওয়া নিয়মবিরুদ্ধ।
বিজেপির দক্ষিণ মালদহ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পার্থসারথী ঘোষ বলেন, রাজ্যে আইনের শাসন চলে না। সরকার এবং দলের পার্থক্য থাকছে না। কাউন্সিলারের বাড়িতে দুয়ারে সরকার শিবির মেনে নেওয়া যায় না।
এবিষয়ে মণীষার মন্তব্য, এটা অফিসিয়াল প্রোটোকল। অফিস আমাদের এখানে ক্যাম্প ফেলেছে। এখানে আমার কোনও বক্তব্য নেই। অফিস যদি দিতে পারে, তাহলে আমার কিসের অসুবিধা?
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহ জুড়ে ৩৭ টি জনমুখী প্রকল্পে মোট ৪ হাজার ৭৪টি ক্যাম্প হবে। প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তা জানান, মালদহে প্রতিদিন চারশো থেকে পাঁচশো ক্যাম্প চলছে। কিন্তু দলীয় কাউন্সিলারের ওয়ার্ড অফিসে ক্যাম্প চালানোর বিষয়ে ইংলিশবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান এর মধ্যে কোনও অন্যায় দেখছেন না। তিনি বলেন, আমার অফিসে কোনও দলের মানুষ আসছেন না, সার্টিফিকেট নিচ্ছেন না। আমি যখন জিতব, তখন সব দলের প্রতিনিধি। যতক্ষণ জিতিনি, তখন নির্দিষ্ট একটি দলের।