নৌকা, ট্রাক্টরে চেপে তিস্তার চরের বাসিন্দাদের কাছে ‘দুয়ারে সরকার’
বর্তমান | ২৮ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: কার্যত বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বাস বাহের চরের বাসিন্দাদের। সেখানে পৌঁছনোর না আছে রাস্তা, না আছে যানবাহন। কিন্তু চরম প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে এই প্রথম সেখানে পৌঁছল ‘দুয়ারে সরকার’। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকা কচুয়া বোয়ালমারির ৬ নম্বর স্পার থেকে প্রথমে নৌকায় প্রায় দু’কিমি। তারপর তিস্তার বালির চরের উপর দিয়ে আরও সাত কিলোমিটার ট্রাক্টরে। রাজ্য সরকারের জনমুখী বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দিতে সোমবার বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে সেখানে পৌঁছন বিডিও মিহির কর্মকার।
প্রায় দেড় হাজার মানুষের বাস বাহের চরে। বিদ্যুৎ নেই গ্রামে। রাত হলে কয়েকটি বাড়িতে জ্বলে ওঠে সৌরবাতি। ফলে এদিন ব্লক প্রশাসনের তরফে জেনারেটরের ব্যবস্থা করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই চরে। জেনারেটরের মাধ্যমে চালানো হয় কম্পিউটার, ল্যাপটপ এবং প্রিন্টার। সরকারি সহায়তা পেতে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে ভিড় জমান বাহিরের চরের বাসিন্দারা। দিন শেষে প্রায় আড়াইশো বাসিন্দার আবেদন জমা পড়েছে শিবিরে।
জলপাইগুড়ি সদরের বিডিও মিহির কর্মকার বলেন, এই প্রথম আমরা বাহের চরে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প করতে পারলাম। প্রতিটি প্রকল্পে আবেদন জমা পড়েছে এদিন। সেখানকার বাসিন্দাদের জমির খতিয়ান না থাকা সহ বেশকিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলি নিয়ে যতটা সম্ভব এদিন আলোচনা হয়েছে। ওই চরে পৌঁছনো সত্যিই কঠিন। তবুও আমরা প্রতিটি মানুষের কাছে সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর।
দীর্ঘ নদীপথ ও চর পেরিয়ে সরকারি পরিষেবার ডালি নিয়ে প্রশাসন তাঁদের দুয়ারে আসায় উচ্ছ্বসিত সন্তোষ মণ্ডল, কাজল বিশ্বাস, নয়নতারা সরকারের মতো বাসিন্দারা। বললেন, জীবনে প্রথমবার এত আধিকারিককে আমাদের চরে দেখছি। প্রশাসন যে আমাদের জন্য ভাবছে, দেখে সত্যিই ভালো লাগল।
জাতিগত শংসাপত্র পেতে এদিন দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে আবেদন জানান সন্তোষ। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পেতে আবেদন জানান কাজল। নয়নতারা বার্ধক্যভাতার আবেদন জানান। বিডিও বলেন, বাহের চর এলাকায় বাসিন্দাদের অনেকে পাট্টা পেয়েছেন। কিন্তু জমির খতিয়ান নেই তাঁদের। ফলে তাঁরা কৃষকবন্ধুর সুবিধা পাচ্ছেন না। সমস্যা সমাধানে কথা বলা হয়েছে এলাকার চাষিদের সঙ্গে।
বিডিওকে কাছে পেয়ে এদিন চরের বাসিন্দারা বলেন, এবারের বর্ষায় তিস্তার ভাঙনে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে প্রাইমারি স্কুলটি। ফলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা কার্যত লাটে উঠেছে। কিছুদিন হল অস্থায়ীভাবে স্কুল চললেও তা না চলার মতো। বিডিও বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাদপ্তরের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দেন বাসিন্দাদের। পরে স্কুলের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন তিস্তায় জল রয়েছে। ফলে নৌকায় ইট, বালি, সিমেন্ট কিংবা ছাউনির জন্য টিন নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। জল কমলে যখন নদীর উপর দিয়ে ট্রাক্টর চলাচল করতে পারবে, তখনই নতুন করে স্কুলভবন তৈরির সামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।