• খুনি সঞ্জয়ের ফাঁসি চাই না! হাইকোর্টে উল্টো সুর অভয়ার মা-বাবার
    বর্তমান | ২৮ জানুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আর জি কর-কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত খুনি সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির সাজা চায় না নির্যাতিতার পরিবার। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে এমনই উল্টো সুর শোনা গিয়েছে অভয়ার বাবার মুখে। সেইসঙ্গে সঞ্জয়ের ফাঁসির দাবিতে রাজ্যের দায়ের করা আবেদন গ্রহণযোগ্য কি না, তা নিয়ে শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রেখেছে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। 


    আর জি করের ঘটনায় শিয়ালদহ আদালত সঞ্জয়ের আমৃত্যু কারাবাসের সাজা ঘোষণার পর অভয়ার বাবা-মাকে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল। আর এদিন হাইকোর্ট চত্বরে দাঁড়িয়ে অভয়ার বাবা নিজেই বললেন, ‘কেন আমরা সঞ্জয়ের ফাঁসি চাইছি না, সেটা আমাদের আইনজীবী স্পষ্ট করে দেবেন। এখনও পর্যন্ত এই মামলার বিষয়ে আমাদেরকে রাজ্যের তরফে কিছুই জানানো হয়নি। কে কী মামলা করেছে, সেটাও জানি না। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের সকলকে তদন্তের আওতায় এনে চরম শাস্তি দেওয়া হোক, এটাই আমরা চাইছি।’ রাজ্য বা সিবিআইয়ের আর্জিতে তাঁদের সমর্থন রয়েছে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে অভয়ার বাবা বলেন, ‘রাজ্যের পুলিস আমাদের বিশ্বাস ভেঙেছে। সিবিআইও তদন্ত করতে পারেনি, সেটা নিম্ন আদালতেই দেখা গিয়েছে। আমার মেয়ের জন্য বিচার যারা দিতে পারবে, তাদের উপর আমরা আস্থা রাখব। আমরা হাইকোর্টের কাছে একাধিক প্রশ্ন রেখেছি।’  


    সঞ্জয়কে নিয়ে চাপানউতোর চলছে নিম্ন আদালতের রায় ঘোষণার দিন থেকেই। ফাঁসির সাজা না হওয়ায় সে কোন সেলে থাকছে, কী খাচ্ছে, কেমন কাজ করছে, এরকম বহু প্রশ্ন নিয়ে চর্চাও চলছে। বর্তমানে তাকে প্রেসিডেন্সি জেলের ৬ নম্বর সেলে রাখা হয়েছে। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে তার সেল বদলাতে পারে বলে খবর। তবে তাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি লড়াই অবশ্য চলছে জেলের বাইরে, আদালতের কক্ষে। এর আগে বিচারপতি বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে সঞ্জয়ের ফাঁসির ইস্যুতে রাজ্যের আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে শুনানি চলাকালীন অভয়ার পরিবারের আইনজীবী শামিম আহমেদ স্পষ্ট জানান, ‘রাজ্য এবং সিবিআইয়ের আবেদনের ব্যাপারে কোনও বক্তব্য নেই। তাদের আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে কি না, তা আদালত ঠিক করবে। রাজ্য এবং কেন্দ্রের এই আবেদন সংক্রান্ত মামলায় আমরা সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ সাজা চাই না।’


    এদিন শুনানিতে উঠে আসে রাজ্যের আবেদনে সিবিআইয়ের বিরোধিতা প্রসঙ্গও। তার প্রেক্ষিতে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, ‘ফৌজদারি বিধির (কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিওর) ৩৭৭ এবং ৩৭৮ ধারায় বলা আছে, তদন্তকারী সংস্থা ছাড়াও রাজ্য আবেদন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে ‘এবং’ শব্দ যুক্ত করে রাজ্যকে সেই এক্তিয়ার দেওয়া হয়েছিল।’ রাজ্যের এই বক্তব্যের পাল্টা কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু জানান, ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতার নতুন আইনে ফৌজদারি বিধির ওই দুই ধারার প্রভাব নেই। ফলে এ ক্ষেত্রে ওই দুই ধারা প্রযোজ্য হয় না। তাছাড়া এই মামলার কেস ডায়েরি-সহ সব নথি সিবিআইয়ের কাছে রয়েছে। রাজ্যের কাছে কোনও নথি নেই। উভয় পক্ষের সওয়াল জবাব শুনে বিচারপতি বসাক অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলের কাছে জানতে চান, ‘নিম্ন আদালতের রায়ের পর কেন্দ্র যদি কোনও আবেদন না করত, তবে কি রাজ্যের সে ক্ষেত্রেও কিছু করার থাকত না?’ শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রেখেছে বেঞ্চ।
  • Link to this news (বর্তমান)