সংবাদদাতা, কাটোয়া: রিলসের নেশাই কাড়ল প্রাণ। কাটোয়া-আহমদপুর শাখার কেতুগ্রামের কান্দরা স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের ছাদে ওঠায় ওভারহেড তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু হল। সোমবার ট্রেনের ছাদে উঠে ওই পড়ুয়া রিলস বানাচ্ছিল। নীচে তারই দুই বন্ধু দাঁড়িয়ে ভিডিও তুলছিল। ওভারহেড তারে হাত লেগে ছিটকে ওই পড়ুয়া কামরার ছাদের উপর পড়ে যায়। রক্তে ভেসে যায় শরীর। তার গায়েও আগুন ধরে যায়। রেল পুলিস জানিয়েছে, মৃতের নাম মহম্মদ ইব্রাহিম চৌধুরী ওরফে দিসান(১৫)। বাড়ি কেতুগ্রামের খাঁজি গ্রামে। স্যার আশুতোষ মেমোরিয়াল স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ত সে। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকালে সাড়ে ৭টা নাগাদ মহম্মদ ইব্রাহিম গ্রামের দুই বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি থেকে বের হয়। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাবে বলে সে মাকে জানিয়েছিল। এরপর ইব্রাহিম দুই বন্ধুর সঙ্গে বাইকে চেপে কান্দরা স্টেশনে যায়। ওই শাখায় সারাদিনে মাত্র এক জোড়া ট্রেন যাতায়াত করে। তাই সারাদিন স্টেশন চত্বর কার্যত ফাঁকাই থাকে। এদিন একটি আপ লোকাল ট্রেনের জন্য কয়েকজন যাত্রী স্টেশন চত্বরে অপেক্ষা করছিলেন। ৩নম্বর প্ল্যাটফর্মে চার কামরার একটি রেক কয়েকদিন ধরে রাখা ছিল। ওই ট্রেনের ছাদেই উঠে পড়ে ইব্রাহিম। মোবাইল বের করে রিলস বানাতে শুরু করে বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের।
মোবাইল নিয়ে হাত উপরের দিকে তুলতেই ২৫হাজার ভোল্টের ওভারহেড তারে তার শরীর স্পর্শ হয়। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সে ছাদেই ছিটকে পড়ে। কামরায় ধাক্কা খেয়ে রক্তাক্ত হয়ে যায় সে। তার শরীরে আগুন ধরে যায়। বিকট শব্দ শুনে স্থানীয় বাসিন্দা ও রেলকর্মীরা আগুন নেভান। তার কয়েক ঘণ্টা পর রেলপুলিস দেহ উদ্ধার করে। ইব্রাহিমের এক বন্ধু বলে, আমরা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়েছিলাম। ওকে ট্রেনের ছাদে উঠতে বারণ করেছিলাম। তা সত্ত্বেও উপরে উঠে সেলফি তুলতে শুরু করে। তখনই ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্টেশনের সাফাইকর্মী কল্যাণ মণ্ডল বলেন, আমরা বারবার ওই পড়ুয়াকে ট্রেনের ছাদে উঠতে বারণ করেছিলাম। আমাদের কথা না শুনে রিলস করতে ছাদে উঠে পড়ে।
ইব্রাহিমের বাবা সুজন চৌধুরী কলকাতায় একটি বেকারিতে কাজ করেন। খবর পেয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে ইব্রাহিম বড়। ছোট ভাই ইসমাইল ও বোন রূপসা সুলতানা দাদার মৃত্যুর খবর শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। মা লাভলি বেগম বলেন, ছেলেকে বারবার এখানে ওখান যেতে বারণ করতাম। কিন্তু আমার কথা শোনে না। মৃতের মামাতো দাদা রয়েল কাজি বলেন, খবর পেয়েই স্টেশনে যাই। ট্রেনের ছাদে রক্তাক্ত অবস্থায় ভাই পড়েছিল। রিলসের নেশা ওর জীবনটা শেষ করে দিল।