শিবপুরের বাদামপুকুরে খননকাজ শুরু, বাম আমলেই বদলেছিল জলাজমির চরিত্র
বর্তমান | ২৮ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: বাম আমলে বদলে ফেলা হয়েছিল পুকুরের চরিত্র। ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের রেকর্ডে জলাজমি বদলে হয়ে গিয়েছিল বাস্তুজমি। এরপর চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় পুকুরটি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলেও গত কয়েক বছরে ভুয়ো নথিপত্র দেখিয়ে একটু একটু করে বুজিয়ে ফেলা হয়েছে। সম্প্রতি মধ্য হাওড়ার শিবপুরের বাদাম পুকুরকে বাঁচাতে উদ্যোগ নেয় হাওড়া পুরসভা। পুকুরের ইতিহাস বদলের নেপথ্যে থাকা অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর। পুকুরটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে ইতিমধ্যেই খননকাজ শুরু করেছে পুরসভা।
মধ্য হাওড়ার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাধব ঘোষ লেন এলাকার বাসিন্দারা বহু বছর ধরেই এই বাদামপুকুরের উপর নির্ভরশীল। এক সময়ে পাঁচ কাঠা জায়গা জুড়ে ছিল এই পুকুর। বর্ষায় আশপাশ এলাকার জল এসে পড়ত এই পুকুরে। অভিযোগ, গত চার বছর ধরে একটু একটু করে এই পুকুরকে বুজিয়ে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে জলাজমি বলতে পড়ে রয়েছে খুব সামান্য অংশ। সম্প্রতি স্থানীয় ক্লাব কর্তৃপক্ষের অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে হাওড়া পুরসভা। পুকুরটি বাঁচাতে পুরসভার কাছে আর্জি জানান স্থানীয় বাসিন্দারাও। এরপর পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ডাঃ সুজয় চক্রবর্তী যোগাযোগ করেন অতিরিক্ত জেলাশাসকের (ভূমি ও ভূমি রাজস্ব) সঙ্গে। তাদের অন্তর্তদন্তে দেখা যায়, ১৯৮০ সালে অসাধু উপায়ে সরকারি রেকর্ডে থাকা পুকুরের চরিত্র বদল করা হয়েছিল। জলাজমি হয়ে গিয়েছিল বাস্তুজমি। তবে এত বছর ওই পুকুর বোজানো হয়নি। বছর কয়েক আগে জমির মালিকানা হস্তান্তর হওয়ার পর একটু একটু করে বোজানোর কাজ শুরু হয়। সেই কাজের জন্য ২০২১ সালে পুরসভায় পুকুরের চরিত্র বদল নিয়ে একগুচ্ছ ভুয়ো নথি জমা পড়ে। সেই জাল নথি দেখিয়েই অসাধু প্রোমোটিং চক্র পুকুর ভরাট করছিল বলে অভিযোগ।
জানা গিয়েছে, পুরসভার তরফে অভিযোগ পেয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসকের নির্দেশে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব এবং ফিশারি দপ্তর তদন্তে নামে। ইতিমধ্যেই ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর পুকুর বোজানোর সঙ্গে যুক্ত অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। ইনল্যান্ড ফিশারিস অ্যাক্ট অনুযায়ী, বাদামপুকুরকে পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই পুকুর খননের কাজ শুরু করেছে পুরসভা। প্রায় বুজে আসা পুকুর এদিন পরিদর্শন করেন হাওড়া পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ডাঃ সুজয় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘পুকুর খনন করতে গেলে প্রোমোটিং চক্র আমাদের কর্মীদের বাধা দেয়। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা রুখে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা আমাদের পাশে রয়েছেন। পুকুরটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আড়াই মাসের মধ্যে খননকাজ শেষ করা হবে।’ নিজস্ব চিত্র