• সরকারের কম্পোজ়িট গ্রান্ট অমিল, গ্রামবাসীদের উদ্যোগে ভূরিভোজ
    এই সময় | ২৮ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, চন্দ্রকোণা: সারাদিন চলল বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। হাতে হাত মিলিয়ে আনন্দভাগ। খেলা, পুরস্কার বিতরণ, পেটপুরে মিড-ডে মিল। দুপুরে ভাত-ডাল, বাঁধাকপি, মাংস, মাছ, চাটনি, মিষ্টি, পাপড়। আয়োজন দেখে কে বলবে গত দু’বছর ধরে সরকারের কম্পোজি়ট গ্রান্ট বন্ধ রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা-৩ ব্লকের ডুমুরগেড়িয়া জুনিয়র হাই স্কুলে!

    অর্থাভাবে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নিয়ে ছিল সংশয়! সেই সংশয় মিটল গ্রামবাসীদের উদ্যোগে। কেউ দিলেন চাল-ডাল, কেউ দিলেন আনাজ-মাংস, কেউ মাছ-মিষ্টি। কেউ আবার প্যান্ডেল, মাইক, পুরস্কার কেনার টাকা। সঙ্গে ভূরিভোজের পেল্লাই আয়োজন।

    গ্রামের পাকা রাস্তা থেকে মেরেকেটে ১০০ মিটার দূরে স্কুল। সামনে ছোট খেলার মাঠ। একপ্রান্তে শামিয়ানা খাটিয়ে মঞ্চ। মাইকে বাজছে গান—‘মানুষ মানুষের জন্যে...।’ স্কুলের ছেলেমেয়েরা বুকে প্রতিযোগীর ব্যাজ এঁটে দৌড়ে বেড়াচ্ছে এ দিক সে দিক। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের সঙ্গে রান্নায় মেতেছেন গ্রামের মানুষও।

    সোমবার এমনই দৃশ্য ফুটে উঠল ডুমুরগেড়িয়া জুনিয়র হাই স্কুলে। স্কুলে অর্থাভাব স্পষ্ট হলেও হারাতে পারেনি গ্রামবাসীদের উদ্যমকে।

    এই প্রসঙ্গে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সমীরণ আচার্য বললেন, ‘বছর দুয়েক স্কুলের কম্পোজ়িট গ্রান্ট আসেনি। প্রত্যন্ত গ্রামের এই স্কুলে অর্থও নেই। আশপাশের ছ’টি গ্রামের মানুষ পুরো আয়োজন করেছেন। ২০১০ সালে স্কুলের অনুমোদনের পর থেকেই স্কুল গড়তে বিভিন্ন সময়ে এগিয়ে এসেছে এলাকাবাসী। ওঁরা স্কুলকে ভালোবাসেন। অর্থাভাব থাকলেও স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া বা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আটকায়নি। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা যৎসামান্য করেছি মাত্র।’

    এই স্কুলে পড়ুয়া ১১৫ জন। তিন জন শিক্ষক ও একজন শিক্ষাকর্মী। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে ডুমুরগেড়িয়া, চাঁদাবিলা, টেলটোকা, আগরি, মালিডাঙা, বেঙ্গাইশোল গ্রামগুলির সম্পর্ক। এলাকার বাসিন্দা ষষ্ঠী খান, শুকদেব ভাণ্ডারী, নিমাই পাল, উৎপল মাহাতো, রাজীব ঘোষ, কার্তিক বেরা, খুকুমনি মাহাতোদের মতো অনেকেই অনুষ্ঠানের সাফল্যে সাহায্যে করেছেন।

    স্থানীয় শুকদেব ভাণ্ডারির কথায়, ‘আমাদের এলাকার স্কুল। সকলে ভালো চাই বলেই এগিয়ে এসেছি। স্কুলের শিক্ষক সমীরণ আচার্য, দীপককুমার বেরা, চিরঞ্জীব রায়, শিক্ষাকর্মী অচিন্ত হালদাররাও অনেক চেষ্টা করেন।’ পড়ুয়া সাথী আহির, অনুপ মাহাতো, মিনা মাহাতো, শুভ মাহাতোরা বলে, ‘খুব মজা হয়েছে। খেলার সঙ্গে ছিল খাওয়া-দাওয়ার এলাহি আয়োজন।’

    গড়বেতা দক্ষিণ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (এসআইএস) সুকুমার গোস্বামীর কথায়, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয় বা জুনিয়ার স্কুলগুলোর ক্ষেত্রে সে ভাবে সরকারি গ্রান্ট নেই। ফলে স্থানীয় মানুষ যদি অনৈতিক কোনও কিছু না করে ছেলেমেয়েদের জন্য সাহায্য করে এগিয়ে আসেন তা হলে আমরা তাঁদের সাধুবাদ জানাব।’ সঙ্গে জুড়লেন, ‘কম্পোজ়িট গ্রান্ট আসা শুরু করেছে। খুব শীঘ্রই স্কুলগুলো পেয়ে যাবে।’

    আমারই চেতনার রঙে পান্না হলো সবুজ, চুনি উঠল রাঙা হয়ে। আমি চোখ মেললুম আকাশে, জ্বলে উঠল আলো পুবে-পশ্চিমে।’—রবীন্দ্রনাথ। ‘শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা আনে বিপ্লব, বিপ্লব আনে মুক্তি।’—লেনিন।

    কবি থেকে দার্শনিক, সকলের কণ্ঠেই যুগে যুগে শোনা গিয়েছে চেতনার জয়গান। চেতনার বিকাশই মানবজীবনের উত্তরণ ঘটায়। এই বিকাশের প্রতিফলন দেখা গেল পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের এই স্কুলে।

  • Link to this news (এই সময়)