সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘স্ক্রল’ করলেই ভেসে আসছে আইআইটি বাবার ভিডিও। ঝরঝরে হিন্দি, ইংরেজিতে তিনি ‘প্রবচন’ দিয়ে চলছেন। কখনও তিনি আধ্যাত্মিক জগতে ডুব দিচ্ছেন। আবার কখনও আগামীর ভারত কোন পথে যাবে, তার আভাস দিচ্ছেন। আইআইটি পাশ থেকে এই জীবন বেছে নিয়েছেন তিনি। তাঁর জীবন কাহিনী ও দর্শনে মুগ্ধ হয়েছে নেটিজেনরা। ভাতারের অমিত সামন্তও তার বাইরে নন। যেদিন থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আইআইটি বাবার ‘আবির্ভাব’ হয়েছে সেদিন থেকেই তিনি তাঁর ফ্যান হয়ে গিয়েছেন। যত সময় গড়িয়েছে ততই তাঁর প্রতি ভাতারের যুবকের অকর্ষণ বেড়েছে। অবশেষে অমিত তাঁকে সামনে থেকে ‘দর্শন’ করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রয়াগরাজে যাওয়ার জন্য ট্রেনের টিকিট পেতে হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকেন। কিন্তু টিকিট মেলেনি। ‘বাবা’র দর্শন পাওয়ার জন্য তিনি সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করেন। কেউ গাড়ি ভাড়া করে প্রয়াগে যাচ্ছেন কি না তা জানতে ফেসবুক ফ্রেন্ডদের মেসেজ করতে থকেন। অবশেষে সাফল্য আসে। বর্ধমানের কয়েকজন যুবক কুম্ভ যাচ্ছেন জানতে পেরে তিনি তাঁদের দ্বারস্থ হন। অমিত বলেন, গাড়িতে যাওয়ার জন্য ভাগে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানানো হয়। খাওয়ার খরচ আরও কয়েক হাজার টাকা। এত টাকা ছিল না। বাড়িতে কিছু ধান জমা ছিল। সেটা বিক্রি করে সাড়ে সাত হাজার টাকা পাওয়া যায়। পরে সংসার চালাতে হয়তো কিছুটা সমস্যা হবে। কিন্তু ‘আইআইটি বাবা’কে দেখার সুযোগ তো মিলবে।
অমিতদের অল্প পরিমাণ জমি রয়েছে। চাষ করেই তাঁদের সংসার চলে। বাড়িতে তাঁর বাবা এবং মা রয়েছে। তাঁরা প্রথমে বিষয়টিতে সম্মতি দেননি। পরে ছেলের ঝোঁক দেখে আর তাঁকে বাধা দেয়নি। মঙ্গলবার কার্জনগেটের কাছে গাড়ির জন্য তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, আইআইটি বাবার মধ্যে অন্যরকম প্রতিভা রয়েছে। তাঁর প্রতিটা কথা মূল্যবান মনে হয়েছে। তাঁর মতো উচ্চশিক্ষিত যুবক কেন আধ্যাত্মিক জগৎ বেছে নিলেন। সেটা জানার ইচ্ছে রয়েছে। সুযোগ পেলে তা জানতে চাওয়া হবে। তাঁর সামনে যেতে পারলেই নিজেকে ধন্য বলে মনে করব।
রেলসূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু অমিত নয়, প্রয়াগ যাওয়ার ঝোঁক তাঁর মতো বহু যুবকের। অধিকাংশ ট্রেনের টিকিট শেষ হয়ে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে তাঁরা গাড়ি ভাড়া করে প্রয়াগে পুণ্যস্নান করতে যাচ্ছেন। বিশেষ তিথিতে ডুব দেওয়া তাঁদের লক্ষ্য। আর অমিতের উদ্দেশ্যে আইআইটি বাবার সানিধ্য পাওয়া। সেই উদ্দেশ্যেই তিনি ভাতার থেকে পাড়ি দিয়েছেন প্রয়াগের উদ্দেশে। রাস্তায় যেতে যেতেও সে আইআইটি বাবা অভয় সিং’য়ের আত্ম উপলদ্ধির কথা শুনছেন। তিনি বলছেন, জ্ঞান কা পিছে চলতে চলতে কাঁহা যাওগে, ইধার হি তো আওগে’। ‘ইধার’ বলতে তিনি কোন দিকের কথা বলেছেন তা স্পষ্ট নয়। তবে অমিতদের কাছে ‘ইধার’ মানে আইআইটি বাবার কাছে পৌঁছনো। সেই কারণে নিজের জমির ধান বিক্রি করে দিয়েছেন প্রয়াগে যাওয়ার জন্য।